সেনাউল হক ও অরিন্দম বাগ,কালিয়াচক ও মালদা: মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়। বিয়েতে বাধা দেয় ছেলে। সোমবার ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মামাবাড়ির সদস্যদের দাবি, বিয়েতে বাধা দেওয়ার কারণেই ছেলেকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বাবা। যদিও, ছেলে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি অভিযুক্ত বাবার।
মৃত তরুণের নাম রাজ মোমিন (১৮)। বাড়ি কালিয়াচকের আলিপুর পঞ্চায়েতের বোসনিটোলা গ্রামে। বিকেলে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠায় পুলিশ। বাড়ি লাগোয়া ইলেক্ট্রিকের দোকানে কাজ করতেন রাজ। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে রাজের বাবা সরফরাজ আলম স্ত্রী শামিমা বিবির ওপর অত্যাচার চালাত। একসময় শামিমা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সেইসময় থেকেই তিনি নিজের দাদা ও ভাইবোনদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ মাঝেমধ্যেই রাত করে বাড়ি ফিরতেন। বিষয়টি নিয়ে রবিবার রাতে বাবার সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়। সোমবার সকালে দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তড়িঘড়ি স্থানীয় ছিলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরদিকে রাজের মামার বাড়ির সদস্যদের দাবি, সরফরাজ দ্বিতীয় বিয়ের কথা বললে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছেলে রাজ। ওই আক্রোশ থেকেই রাজকে খুন করা হয়েছে।
রাজের মাসি সাবানা বিবির দাবি, ‘দুইদিন আগে সকালে রাজ ফোন করে জানায় তার কাকা ডনি মোমিন ওকে মারধর করছে। রবিবার সন্ধ্যায় ও আমাদের বাড়ি চলে আসে। এরই মধ্যে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য ফোন আসতে শুরু করে। ফোন পেয়ে রাজ বাড়ি চলে যায়। কিন্তু তারপর থেকে ওকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন পরিবারের অন্য একজনকে ফোন করে জানতে পারি, রাজ সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। তার কিছু সময় পরে আমাদের জানানো হয় গলায় ফাঁস লাগিয়ে রাজ আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমাদের ধারণা রাজকে খুন করা হয়েছে।’
রাজের মামা শামিমের বক্তব্য, ‘স্বামীর অত্যাচারে দিদি পাগল হয়ে গিয়েছে। ছোট থেকেই ভাগ্নে আমাদের বাড়িতে থাকত। দেড় মাস আগে রাজের চাচাতো ভাই মারা যায়। সেইসময় ওরা জোর করে রাজকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এখন দিদির স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইছে। তাতেই বাধা দেয় রাজ। রাত ১১টা নাগাদ আমরা রাজের মৃত্যুসংবাদ পাই। গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। এনিয়ে আমরা পুলিশে অভিযোগ জানাচ্ছি।’
যদিও রাজের বাবা জুগনু মোমিন বলেন, ‘ছেলে মাঝেমধ্যেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরত। এই নিয়েই ওর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু ছেলে যে এরকম করবে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।’ কালিয়াচক থানার পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে মৃতদেহটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।