উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ইরান ইজরায়েল সংঘাত শুরুর পর থেকেই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে ইরান। ভারতীয় সময় রবিবার ভোরে ইরানের ৩ পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন হামলার পরই সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে। সূত্রের খবর, ইরানের সংসদ ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে এই সিদ্ধান্তে। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। রবিবার তাঁদের একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ইরানের প্রেস টিভি।
এই হরমুজ প্রণালী বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলির মধ্যে একটি, যে পথ দিয়ে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাস সরবরাহের পাঁচ ভাগের এক ভাগ প্রবাহিত হয়। এটি পারস্য উপসাগরকে আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানটি প্রায় ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত। কিন্তু জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহৃত জলপথটি আরও সংকীর্ণ (উভয়দিকে প্রায় ৩ কিলোমিটার)। এই সরু চ্যানেলটি ইরানকে (উত্তর) আরব উপদ্বীপ (দক্ষিণ) থেকে পৃথক করেছে।
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালীর উপকূলবর্তী সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, ইরান এবং কুয়েতের মতো দেশগুলি থেকে তেল রপ্তানির সিংহভাগ এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়েই সম্পন্ন হয়। ভারতের জন্যও এই হরমুজ প্রণালী গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ভারতের মোট আমদানিকৃত ৫.৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ ব্যারেল এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়েই আসে।
তবে বর্তমানে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের মতো বিকল্প উৎসগুলি থেকে তেল আমদানির পথ খোলা থাকায় এই হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রভাব খুব একটাও যে ভাবাবে ভারতকে, তেমনটা কিন্তু নয়। প্রসঙ্গত, রাশিয়া তেল পরিবহণের জন্য এই হরমুজ প্রণালী ব্যবহার করে না। রাশিয়ার তেল প্রবাহিত হয় সুয়েজ খাল, কেপ অফ গুড হোপ বা প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য দিয়ে। অপরদিকে ভারতে গ্যাস সরবরাহকারী কাতারও গ্যাস সরবরাহের জন্য হরমুজ প্রনালীর ওপর নির্ভরশীল নয়। এছাড়াও ভারতের সামনে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির রাস্তা খোলা রয়েছে। তবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হলে তার প্রভাব তেলের দামের ওপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এর ফলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে বলেই অনুমান করছেন তাঁরা।