রায়গঞ্জ: কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় স্বামীর। মুহূর্তের মধ্যেই যেন লন্ডভন্ড হয়ে যায় সাজানো গোছানো সংসার। দর্শনে স্নাতক হওয়া সত্ত্বেও স্বামীহারা হওয়ার পর সংসার চালাতে ভিক্ষাবৃত্তির (Begging) পথ বেছে নেন রায়গঞ্জের (Raiganj) বাসিন্দা রুমকি দাস। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রায়গঞ্জ রেলস্টেশন, মেডিকেল কলেজ, পৌর বাসস্ট্যান্ড সহ একাধিক জায়গায় ভিক্ষা করতে দেখা যায় তাঁকে। তাঁর একমাত্র ছেলে রায়গঞ্জেরই এক সরকারি স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ শহরের চণ্ডীতলা এলাকার বাসিন্দা রুমকি দাস (৩৭)। ২০১০ সালে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে স্নাতক হন (Graduate)। এরপর ২০১২ সালে চণ্ডীতলার বাসিন্দা ভূমি সংস্কার দপ্তরের অস্থায়ী কর্মী বিকাশ দাসের সঙ্গে বিবাহ হয় তাঁর। পরবর্তীতে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রুমকিদেবী। কিন্তু ২০১৭ সালে বাইকে করে কালিয়াগঞ্জ থেকে রায়গঞ্জে আসার সময় লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান স্বামী বিকাশ দাস। তারপর থেকে জীবন যুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হয় রুমকিদেবীর। অনেক ঘোরাঘুরি করেও মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য। শেষে দুধের শিশুকে কোলে নিয়েই রাস্তায় পাত্র নিয়ে ভিক্ষা শুরু করেন তিনি। এরপর ছেলেকে পরিবারের কাছে রেখেই একাই বেরিয়ে পড়েন। এভাবেই বড় করে তুলেছেন নিজের ছেলেকে। এবছর রায়গঞ্জ সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে সে।
সম্প্রতি রায়গঞ্জ রেলস্টেশনের ফ্লাইওভারের সিঁড়িতে বসে ভিক্ষা করছিলেন রুমকি। তখন তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে গিয়েছি। স্বামীর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু চাকরি হয়নি। তাই ভিক্ষা করছি। ছেলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১০ সালে দর্শনে অনার্স নিয়ে স্নাতক হয়েছি। আগে টিউশন পড়াতাম কিন্তু এখন আর কিছুই মনে নেই।’ এক সমাজকর্মী নিবেদিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘একসময় ভালো ছাত্রী ছিলেন রুমকিদেবী। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকেন। আমরা বেশ কয়েকবার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিকেলে ভর্তি করি। বাড়িতেও নিয়ে আসি। কিন্তু উনি এখন ফুটপাতেই দিন কাটান।’ অন্যদিকে, তাঁর ছেলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘রুমকিদেবীর পুত্র আমাদের স্কুলের ছাত্র। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। বাবা নেই জানি। কিন্তু পরিবারের বিষয়টি জানা নেই।’