হরিশ্চন্দ্রপুর: সর্ষের মধ্যেই ভূত! বেআইনি পাট্টা বিলি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের (TMC) পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। এবার মালদার (Malda Information) হরিশ্চন্দ্রপুর (Harishchandrapur) ২ নম্বর ব্লকের শাসক দলেরই পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলামের পরিবারের নামে বেআইনিভাবে তিন বিঘা জমি পাট্টা নেওয়ার অভিযোগ উঠল। এই পাট্টা প্রাপকের তালিকায় রয়েছেন বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষর ভাই তথা শাসক দলের ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি সামিরুল ইসলাম, আরেক ভাই মানজারুল ইসলাম এবং দুই ভাই বউ আফসানা খাতুন এবং মমতাজ বিবির নাম। প্রত্যেকের নামে ২৫ শতক করে জমি পাট্টা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
অন্যদিকে, কর্মাধ্যক্ষর আরও চার আত্মীয়র নামে আরও দুই বিঘা জমি পাট্টা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পঞ্চায়েত সমিতির বাকি সভাপতি সহ সদস্যদের। এই নিয়ে তাঁরা বিডিও সহ ভূমি সংস্কার দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে জানান। এদিন বিকেলে এই পাট্টার তালিকা সামনে আসতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং বিত্তবান হওয়া সত্ত্বেও কি করে বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষর আত্মীয়রা পাট্টা পেলেন এই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন সামনে এসেছে।
শাসক দলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, ওই কর্মাধ্যক্ষের এলাকায় যথেষ্ট সম্পত্তি রয়েছে। দোতলা বাড়ি-গাড়ি সহ জমি রয়েছে। তবুও তিনি কি করে নিজের ভাই এবং আত্মীয়দের নামে পাট্টা তুললেন। তাঁদের দাবি, এই কেলেঙ্কারিতে ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক যুক্ত রয়েছেন।
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ নজিবুর রহমান বলেন, ‘পাট্টা বিলি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে আমরা সেদিনই অভিযোগ তুলেছিলাম। সেটা যে সত্যি সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।’ ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুরজিৎ দাসের মদতে বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম তাঁর ভাই এবং আত্মীয়দের নামে বেআইনিভাবে জমি পাট্টা নিয়েছেন। অথচ যাঁরা বঞ্চিত গরিব ভূমিহীন ভাঙনে সব হারিয়েছেন তাঁরা আজও পাট্টা পেলেন না।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের অন্ধকারে রেখেই এইভাবে পাট্টা বিলি হয়েছে প্রতিপত্তিশালীদের মধ্যে। আমরা দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব সহ প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাবো।’
যদিও এ ব্যাপারে মোজাহিদুল ইসলাম এবং তাঁর ভাই সামিরুল ইসলামকে বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। এদিকে আজই দপ্তরে শেষ দিন ছিল হরিশ্চন্দ্রপুর ২ এর ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুরজিৎ দাসের। তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এই ঘটনা সম্পর্কে মহকুমা ভূমি সংস্কার আধিকারিক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পঞ্চায়েত সমিতি এবং ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের যুগ্ম ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে পাট্টা প্রাপকের তালিকা তৈরি করা হয়। কিভাবে এটা হল তা খতিয়ে দেখা হবে।’ মহকুমা শাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বেআইনিভাবে কেউ পাট্টা পেলে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই পাট্টা খারিজ করা হবে।’ হরিশ্চন্দ্রপুর ২ এর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাবারক হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য, ওই কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে তদন্ত হবে।