কৌশিক দাস, ক্রান্তি: শতছিন্ন পোশাক গায়ে ভাঙা কুটিরের সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন বিজেন রায়। বাড়িতে ঢুকতেই হাসি হাসি মুখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ডাক দিলেন স্ত্রীকে। ‘বিডিও অফিস থেকে এসেছেন বুঝি?’ না বলতেই মুহূর্তে হাসি মুখটা চুপসে গেল।
ক্রান্তির (Kranti) গোমস্তপাড়ায় বাড়ি বৃদ্ধ দম্পতির। ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন চলে তাঁদের। রাজ্য সরকার থেকে বাংলা আবাস যোজনার (Awas Yojana) ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে আবেদনপত্র জমা করেছিলেন। এরপর সরকারি প্রতিনিধিরা এসে সমীক্ষাও করে গিয়েছেন। তাঁর প্রতিবেশীরা যখন প্রথম কিস্তির অর্থ দিয়ে ইতিমধ্যে ঘর নির্মাণে হাত দিয়েছেন, তখন ভাঙা ঘরে বসে হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন এই দম্পতি। কথাপ্রসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৃদ্ধ বললেন, ‘বেঁচে থাকতে আর বোধহয় একটা ভালো ঘরে থাকার ইচ্ছে পূরণ হবে না। সমীক্ষা করার সময় সরকারি বাবুরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন, আবাসের টাকা আমার অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। অনেকেই ঘরের টাকা পেয়ে গেল, বাদ পড়লাম আমি।’ বিজেনের স্ত্রী ভারতীদেবী জানালেন, তাঁদের এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বাড়িতে শৌচাগার নেই। ভাতা? বিজেন জানালেন, তিনি শুধু বার্ধক্য ভাতা পান। স্ত্রী কোনও ভাতা পান না।
বিজেনের মতো ক্রান্তি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক হতদরিদ্র ব্যক্তি আবেদন সত্ত্বেও আবাসের টাকা পাননি। যেমন ভাণ্ডারীপাড়ার আবু তালেব, গোমস্তপাড়ার বিশেষভাবে সক্ষম সুশীলা রায় প্রমুখ। ক্ষুব্ধ সুশীলার মন্তব্য, ‘পুলিশ এবং বিডিও অফিসের কর্মীরা এসে আমার বাড়িঘর দেখে গিয়েছেন। কী দেখলেন তাঁরা?’ সুশীলার পুত্রবধূ সুমিবালা রায়ও ঘরের আবেদন করেছিলেন। তিনিও পাননি। জরাজীর্ণ দুটো ঘরে পরিবার নিয়ে তাঁরা থাকেন। প্রশাসনের এই আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ তিনি। ঝড়-বৃষ্টির দিনে অন্যের বাড়িতে তাঁদের আশ্রয় নিতে হয় বলে জানালেন সুশীলা। স্কুলডাঙ্গার মোস্তফা আলম, ভাণ্ডারীপাড়ার লায়লা বানু, জ্যোৎস্না রায়, চিকনমাটির সরোদিনী দেব সিংহদের মতো আরও অনেকেই যাঁরা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান, জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকেন, তাঁরা আবাসের টাকা পাননি।
ইতিমধ্যে বিরোধী রাজনৈতক দলগুলি এনিয়ে সোচ্চার হয়েছে। ক্রান্তি ও মাল ব্লক কংগ্রেসের তরফে ক্রান্তি বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। ক্রান্তি ও মাল ব্লক কংগ্রেস সভাপতি যোগেন সরকার ব্লক প্রশাসনকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কোনও নেতা-মন্ত্রীর ওপর আস্থা না রেখে বিডিও এবং পুলিশের আধিকারিকদের ওপর ভরসা করে সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা হচ্ছে দায়িত্ব পালনের নমুনা। অসহায় মানুষগুলো আবাসের টাকা না পেলে আন্দোলন হবে। নবান্ন অবধি যাব আমরা।’ বিজেপির মহিলা মোর্চার জেলা সভানেত্রী দীপা বণিক বলেন, ‘পাকা বাড়ি সত্ত্বেও অনেকেই প্রথম কিস্তির অর্থ পেয়েছেন। অথচ প্রকৃত দাবিদাররা টাকা পাননি। এনিয়ে জোরদার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’
ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায় জানিয়েছেন, ওয়েটিং লিস্টে থাকা ব্যক্তিরা ধাপে ধাপে টাকা পাবেন। ক্রান্তির জয়েন্ট বিডিও সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘ওয়েটিং লিস্টে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এই মুহূর্তে ঘরের টাকা ঢুকছে না। পরবর্তীতে বিষয়টি দেখা হবে।’