সৌরভ রায়, হরিরামপুর: যে স্কুলে শেখানো হয় ‘ব্যাড টাচ গুড টাচ’। নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য যে স্কুলে তৈরি হয়েছে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’। আর সেই স্কুলেই শিক্ষকের হাতে শ্লীলতাহানির (Molestation) শিকার হল নবম ও একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রী। রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার তালিকায় এবার যুক্ত হল দক্ষিণ দিনাজপুরের (Dakshin Dinajpur) হরিরামপুর (Harirampur) ব্লকের একটি স্কুল।
গত শনিবার স্কুলের মধ্যে শ্লীলতাহানির ঘটনার পরে নিজেকে সামলাতে পারেনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি। ঘরের বাইরের দেওয়ালে লেখা চাইল্ড হেল্পলাইনে ফোন করে জানায়। চাইল্ড হেল্পলাইন থেকে ফোন পেয়ে প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষক স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতিকে নিয়ে ছাত্রীদের কাছে যান। অভিযুক্ত শিক্ষকের সামনেই ছাত্রীদের অভিযোগ শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান সকলেই। যদিও এমন ঘটনা নতুন নয় বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘এর আগেও ওই শিক্ষক এমন ঘটনা করেছিলেন। বেশ কয়েকজন অভিভাবক মেয়েদের কাছ থেকে ঘটনার কথা শুনে আমাদের কাছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁকে পরপর দু’বার শোকজ করা হয়েছে। যা জবাব দিয়েছিলেন তা সন্তোষজনক ছিল না। বেশ কয়েকবার ডেকে ওই শিক্ষককে শুধরে নেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনওকিছু হয়নি।’ প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, পুরো ঘটনা লিখিত আকারে জেলা শিক্ষা অধিকারিকের দপ্তরে (ডিআই) পাঠানো হয়েছে। জেলা শিক্ষা আধিকারিক (সেকেন্ডারি) দেবাশিস সমাদ্দার বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে অবশ্যই দেখব।’
অভিযুক্ত শিক্ষক অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাদা টেলিফোনে জানান, তাঁর ভাই স্নায়ুরোগী। চিকিৎসা চলছে। ভাইকে আপাতত ১৫ দিনের জন্য স্কুল থেকে মেডিকেল লিভ নিয়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যাওয়া হবে। জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
এর আগে একাধিক ঘটনা ঘটলেও শনিবারের ঘটনাটি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে চলে যায়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মেয়েরা যেখানে থাকে সেখানে তিনি না বলেই ঢুকে পড়েন। অকারণে ছাত্রীদের ঘুসি মারেন। নানাভাবে শরীর ছোঁয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
এক অভিভাবক বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনও কেন কড়া পদক্ষেপ করেনি জানি না।’ নবম শ্রেণির ছাত্রীটি জানায়, অকারণে শনিবার ওই শিক্ষক তাকে ঘুসি মারতে থাকেন। গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ করে একাদশের এক ছাত্রীটি।
পরিচলন কমিটির সভাপতি বলেন, ‘ওই শিক্ষক মানসিক অবসাদগ্রস্ত। বিষয়টি শিক্ষকের দাদা আমার নজরে এনেছেন। তাঁকে অনেকবার সাবধান করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।’
এদিকে, এমন ঘটনা বারবার ঘটলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি থানায় কিংবা জেলা শিক্ষা দপ্তরের নজরে আনেনি কেন তা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। চাইল্ড হেল্পলাইনের এক আধিকারিক বলেন, ‘ইতিমধ্যেই হরিরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।’