কোচবিহার: মূর্তি ইস্যুতেই কি রাজনৈতিক হাল ফিরতে চলেছে কাকা-ভাইপোর? রীবন্দ্রনাথ ঘোষ ও পার্থপ্রতিম রায় পুরোনো দ্বন্দ্ব ভুলে নতুন করে জুটি বাঁধার পর থেকেই যেন তাঁদের শনির দশা চলছিল। জেলার রাজনীতিতে কার্যত কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও পার্থপ্রতিম। কোনওভাবেই তাঁরা সুবিধা করতে পারছেন না। এবারে পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো তাঁদের হাতের কাছে চলে এসেছে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের এই মূর্তি বিতর্ক। তাতে যেন হালে পানি পেয়েছেন রবি ও তাঁর অনুগামীরা। আর এই ইস্যুটাকে ধরেই আবার নতুন করে নিজেদের অনুগামীদের নিয়ে জেলা রাজনীতিতে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন কাকা-ভাইপো।
ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে মূর্তি বিতর্ক মিটে গিয়েছে। সাগরদিঘির পাড়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের সামনে যে মূর্তি বসবে সেটাও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও এই ইস্যু নিয়ে জেলার রাজনীতিতে আলোচনা কিন্তু কমছে না। সাগরদিঘির পাড়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের সামনে রাজার প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি জ্বালানোর ছবি দিয়ে শনিবার রাতেও পার্থপ্রতিম সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে নাম না করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহকে নিশানা করে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি কোচবিহার পুরসভা দ্রুততার সঙ্গে এই মূর্তি নির্দিষ্ট স্থলেই বসাবে। কোচবিহারবাসী প্রতীক্ষায় রয়েছে সেই দিনের জন্য। গতকাল যাঁর নির্দেশে যে বা যাঁরা বাধাদান করেছেন মূর্তি বসানোর কাজে, তাঁরা কোথাও একটা মহারাজার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছেন।’
পার্থর এই পোস্ট থেকে পরিষ্কার যে, তিনি এর মাধ্যমে দলের মন্ত্রী উদয়ন গুহকেই টার্গেট করেছেন। কারণ সরাসরি না হলেও পরোক্ষে উদয়নের নির্দেশেই যে প্রশাসন শুক্রবার আমতলায় রাজার মূর্তি বসানোর কাজে বাধা দিয়েছে, সেটা কারও অজানা নয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে পার্থপ্রতিম বলছেন, ‘পোস্টে তো আমি কারও নাম করিনি।’
বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও নেতা নয়, খোদ দলেরই মুখপাত্র পার্থপ্রতিমের এধরনের পোস্টকে ঘিরে জেলা তৃণমূল, বলা ভালো উদয়ন শিবির যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে, তা বলাই যায়। জিজ্ঞাসা করা হলে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উদয়ন।
পার্থ একা নন, রবির অনুগামীরাও কোচবিহারের মহারাজাদের প্রতি কোচবিহারবাসীর আবেগকে ইস্যু করে সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট করেই চলেছেন। আর রবিও চাইছেন এই ইস্যুকে আঁকড়ে ধরে ঘর গুছিয়ে নিতে। ফলে এটা যে জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলকে নতুন করে ইন্ধন দেবে তাতে মোটামুটি নিশ্চিত জেলা তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীরা।
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ‘পুরসভা মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরজন্য পুরসভাকে ধন্যবাদ। অপরদিকে, মূর্তি বসানোর জন্য এনবিডিডিও তাদের ফেন্সিং ভাঙতে চেয়েছে। এটা তাদেরও উদারতা। মূর্তি বসানোর জায়গা নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে, সেটা পুরসভা ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিলে এই সমস্যা হত না। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকেও এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হত না।’