গৌরহরি দাস, কোচবিহার: সামনেই বিধানসভা ভোট (Meeting Election)। তার আগে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ভোটব্যাংক ধরতে কি নতুন কোনও ছক কষছে তৃণমূল? কোচবিহার (Cooch Behar)-কে কেন্দ্র করে কি রাজবংশী-রাজনীতির সমীকরণ বদলে যাচ্ছে? সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রথমত, বংশীবদন বর্মনকে সরিয়ে নগেন রায়-ঘনিষ্ঠ হরিহর দাসকে রাজবংশী ভাষা আকাদেমির চেয়ারম্যান করে আগেই একটা বার্তা দিয়েছিল তৃণমূল। আর শনিবার আলাদা রাজ্যের দাবিতে নগেন যখন কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করছেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভোটের আগে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন, সেই সময় তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকলেন হরিহর। এসব থেকেই জোড়াফুল ও পদ্মফুল, দুই শিবিরই মনে করছে, ২০২৬ সালের ভোটের আগে কোচবিহারে অন্য রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।
তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ‘নগেন-ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরেও হরিহরকে যখন রাজ্য নেতৃত্ব রাজবংশী ভাষা আকাদেমির চেয়ারম্যান করেছেন, তখন রাজ্য নেতৃত্বের নিশ্চয়ই কোনও ভাবনাচিন্তা রয়েছে। এবিষয়টি তারাই ভালোভাবে বলতে পারবে।’
নগেনের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক ধীরে ধীরে এমনিতেই খারাপ হওয়ার দিকেই যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে ভোট প্রচারে না নামায় নগেনের বিরুদ্ধে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আগেই অনেক অভিযোগ জমা হয়েছে। লোকসভা ভোটে বিজেপি হারার পর বিজেপিও নগেনকে আগের মতো আর সেভাবে পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু রাজবংশী ভোট বড় বালাই। তাই নগেনকে সরাসরি ছেঁটে ফেলতেও পারছে না তারা। আর এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নগেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে তৃণমূলের। লোকসভা নির্বাচনের পর কোচবিহারে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নগেনের বাবুরহাটের প্রাসাদোপম বাড়িতে যান। বর্তমানে কোচবিহারের তৃণমূল নেতারা বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও সরাসরি নগেনের সমালোচনা করছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, হরিহর কি তাহলে নগেন ও তৃণমূলের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছেন?
জিজ্ঞাসা করা হলে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি হরিহর। ওয়াকিবহাল মহলের মতে বংশীবদন বর্মন ঘাসফুল শিবিরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই রাজ্য সরকার দীর্ঘ বছর তাঁকে রাজবংশী ভাষা আকাদেমির চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে রেখেছিল। অপরদিকে হরিহর যে বিজেপি সাংসদ নগেনের ঘনিষ্ঠ, তা কারও অজানা নয়। শনিবার রাসমেলা মাঠে গ্রেটারের জনসভাতেও দেখা গিয়েছে নগেনের আশপাশে মাত্র তিন-চারজন মঞ্চে বসার সুযোগ পেয়েছেন। তার মধ্যে কিন্তু হরিহর একজন। জনসভার পর রাতে নগেনের বাড়িতে সংগঠনের অন্যতম পদাধিকারীদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও হয়েছে। সেই বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন হরিহর। এর থেকে পরিষ্কার হরিহর নগেনের কতটা ঘনিষ্ঠ। তাহলে বংশীবদনকে সরিয়ে হরিহরকে কেন রাজবংশী ভাষা আকাদেমির চেয়ারম্যান করল তৃণমূল? তাহলে নিশ্চয় হরিহরের মাধ্যমে নগেনকে আরও কাছে পেতে চাইছে তৃণমূল। আর মঞ্চে নগেন যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করছিলেন, তাতে নগেনের সঙ্গে তৃণমূলের সেই সেতুবন্ধন যে কিছুটা দৃঢ় হয়েছে, তা পরিষ্কার। বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মন বলেন, ‘তৃণমূল কাকে কাছে টানবে, কাকে দূরে সরাবে সেটা তাদের ব্যাপার। এই নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’