রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: ট্রেনে কাঠ (Wooden Smuggling) ও গাঁজা পাচার নিয়ে নজিরবিহীন সংঘাত রেল ও জিআরপি’র। সকলের চোখের সামনে নিউ জলপাইগুড়িতে সেগুন কাঠের ২১০টি লগ, ১৫০ বস্তা সুপারি ও ৭৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়েছিল বৃহস্পতিবার। দিনের আলোয় ওই ঘটনা ঘটলেও শুক্রবার রেল দাবি করছে, কোনও মাদক দ্রব্যই ছিল না পার্সেল ট্রেনটিতে।
তদন্তে ওই ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও ট্রেন ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে চলেছে জিআরপি। সেজন্য তিনজনকে নোটিশ পাঠানো হবে। তিনজনকে নির্দিষ্ট ধারায় মামলায় জড়ানোর ভাবনাচিন্তাও হচ্ছে। জিআরপি’র শিলিগুড়ির পুলিশ সুপার কূঁয়রভূষণ সিং জানিয়েছেন, মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জিআরপি’র (GRP) এই সক্রিয়তা একেবারেই নাপসন্দ রেল কর্তৃপক্ষের। রেলের পক্ষ থেকে জিআরপি’র এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মার সাফ বক্তব্য, ‘জিআরপি’র ট্রেনে তল্লাশি চালানোর কোনও এক্তিয়ারই নেই। তল্লাশি করতে হলে হয় যেখান থেকে সামগ্রী তোলা হয়েছে সেখানে নয়তো যেখানে নামানো হবে সেখানে তল্লাশি করা হতে পারে।’
রেল পৃথকভাবে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে জানিয়ে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। সকলের চোখের সামনে চোরাই সামগ্রী অভিযোগে এতকিছু জিআরপি আটক করলেও রেল বিষয়টি লঘু করে দেখাতে চাইছে। ট্রেনটির চালক, ট্রেন ম্যানেজার তল্লাশির সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে খবরকে বৃহস্পতিবার অস্বীকার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু শুক্রবার জিআরপি দাবি করেছে, নিউ জলপাইগুড়ি আসার আগে ধূপগুড়ির কাছে আলতাগ্রাম স্টেশনে ট্রেনটিকে দাঁড় করানোর পরপরই ট্রেনের কর্মীরা সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। জিআরপি আধিকারিকরা শুক্রবারও তাঁদের খোঁজ পাননি। রেলের পালটা দাবি, ওই কর্মীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আছে।
কাঠের পাশাপাশি গাঁজা উদ্ধার হওয়ায় জিআরপি মাদক আইনে মামলা রুজু করেছে। কিন্তু রেল পুরোপুরি মাদক উদ্ধারের খবর অস্বীকার করেছে শুক্রবারও। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কোনও তথ্য গোপন করার জন্যই কি এই লুকোচুরি? নাহলে দুই সরকারি দপ্তরের মধ্যে এমন সংঘাত হবে কেন? রেল কেন্দ্রের অধীন আর জিআরপি রাজ্য সরকারের আওতায়।
জিআরপি দাবি করেছে, পার্সেল ভ্যানে মাদক পাচারের খবরই প্রথম এসেছিল ডিআইজি পদমর্যাদার এক আধিকারিকের কাছে। সেই খবরের ভিত্তিতে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে জিআরপি’র একটি দল রওনা দিয়ে আলতাগ্রাম স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি ওই স্টেশনে পৌঁছালে তল্লাশি করতে চাইলে স্টেশন ম্যানেজার তাদের অনুমতি দেননি।
এই নিয়ে বিরোধ চলাকালীন ট্রেনের চালক, সহকারী চালক এবং ট্রেন ম্যানেজার পালিয়ে যান বলে জিআরপি কর্তাদের দাবি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি তল্লাশি করতে দেবেন না বলে স্টেশন ম্যানেজার জানিয়ে দেন। জিআরপি আধিকারিকরা তখন পুরো ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়িতে নিয়ে আসতে চান। তাতেও প্রথমে রেল অনুমতি দেয়নি বলে অভিযোগ।
এই চাপানউতোরের সময় ট্রেনটি থেকে কয়েকটি কামরা বিচ্ছিন্ন করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে বিস্ফোরক দাবি করছেন জিআরপি কর্তারা। পরে জিআরপি ও রেলের পদস্থ আধিকারিকরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ট্রেনটিকে নিউ জলপাইগুড়িতে আনার ব্যবস্থা হয়। এজন্য নিউ জলপাইগুড়ি থেকে অন্য চালক পাঠানো হয়েছিল ট্রেনটি নিয়ে আসতে। নিউ জলপাইগুড়িতে আনার পর সিল ভেঙে ট্রেনটির পার্সেল ভ্যানে তল্লাশি করে জিআরপি।