সঞ্জীবকুমার দত্ত, কলকাতা: প্রতীক্ষায় ছিল সিটি অফ জয়। তিনি এলেন, দেখলেন, প্রত্যাশামাফিক মাতিয়েও রাখলেন। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে ইডেন গার্ডেন্সে পা রাখতেই শব্দদ্রুম। কোহলিয়ানার মৌতাতে ঊর্ধ্বমুখী পারদ। লক্ষ্মীবারে যতক্ষণ থাকলেন তাঁরই দখলে নন্দনকানন। হোমটিম কলকাতা নাইট রাইডার্স আগেই প্র্যাকটিসে চলে এসেছে। গতানুগতিক অনুশীলন।
যদিও বরুণ চক্রবর্তী, আন্দ্রে রাসেলরা নয়, সবাই বিরাট কোহলির অপেক্ষায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর মাঠে ফিরছেন। সাক্ষী থাকার উন্মাদনা শনিবাসরীয় দ্বৈরথ ঘিরে। এদিন যার বহিঃপ্রকাশ। ম্যাচে বিরাটকে ঘিরে গ্যালারি দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পুর্বাভাস।
বিরাটের প্রতিটি পদক্ষেপকে মন ক্যামেরায় তুলে রাখার সুযোগ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন ভক্তেরা। ক্যামেরার ফোকাসও যথারীতি বিরাটে। অথচ, কিছুটা দূরেই কেকেআরের নেটে আন্দ্রে রাসেল বিগহিটে আগুন ঝরাচ্ছেন, সুনীল নারায়ণের ব্যাটে শটের ফুলঝুরি। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই কারও। নিজভূমে পরবাসে!
নির্ভেজাল বিরাট-ম্যানিয়া। সতীর্থরা মাঠে ঢোকার কিছুক্ষণ পর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বিরাটের প্রবেশ। হাতে গোটা তিন-চারেক ব্যাট। আরও একবার শব্দব্রহ্ম। সমস্বরে কখনও ‘বিরাট বিরাট’, কখনও ‘ভিকে ভিকে’। বাদ গেল না ‘চিকু’-ও (বিরাটের ডাকনাম)।
মেরেকেটে আধঘণ্টার মতো নিবিড় ব্যাটিং অনুশীলন। প্রথমে স্পিনারদের নেটে। ক্রুণাল পান্ডিয়া, লিয়াম লিভিংস্টোন, সুযশ শর্মাদের স্পিনে ব্যাট ঘোরালেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রান পেলেও অফস্টাম্প নিয়ে খচখচানি এখনও মাথা থেকে যায়নি, প্র্যাকটিসে পরিষ্কার। অফস্টাম্পের বাইরে বলে পা বাড়িয়ে ড্রাইভে তাই বাড়তি মনোযোগ।
জোশ হ্যাজেলউডের বিরুদ্ধে অবশ্য অন্য মেজাজে। বিগহিটে আইপিএল সতীর্থ জোশের হোঁশ ওড়ালেন। কেকেআরের বোলারদের জন্য দিয়ে রাখলেন বিরাট-বার্তা। তবে বিরাটের সামনে এদিন কিছুটা এলোমেলো লাগলেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জন্য স্বস্তি ম্যাচ ফিট অজি পেসার। ফুল রানআপে বোলিং করলেন যেভাবে, শনিবার রাসেল-আজিঙ্কা রাহানে-সুনীল নারায়ণদের রক্তচাপ বাড়তে পারে।
সঙ্গী ভুবনেশ্বর কুমার। নিজের সেরা সময় পেরিয়ে এলেও টি২০ ফর্ম্যাটে এখনও অনেক অঙ্ক বদলানোর ক্ষমতা রাখেন। নবাগত টিম ডেভিড, জেকব বেথেলরাও অনুশীলনে মনোযোগী ছাত্র। দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বাড়তি তাগিদ। নতুন অধিনায়ক রজত পাতিদারও প্রত্যাশামাফিক বাড়তি সক্রিয়।
ঘুরেফিরে উন্মাদনার কেন্দ্রবিন্দুতে একজনই। নাম বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। বিরাটও বিন্দাস মেজাজে। তিন ব্যাটেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যাটিং সারলেন। কখনও নেটের বাইরে শ্যাডো প্র্যাকটিস। কখনও বা থ্রো ডাউনে প্র্যাকটিস। বিরাটের স্পেশাল এনার্জির স্পর্শে প্রায় ফাঁকা ইডেনও চনমনে। যতক্ষণ মাঠে থাকলেন, ঠায় দাঁড়িয়ে বিরাট-ভক্তের দলও।
বেশ কয়েকবছর হল আরসিবি-র নেতৃত্ব ছেড়েছেন। যদিও দলের মূল মুখ বিরাটই। অষ্টাদশতম প্রচেষ্টা প্রথম ট্রফির স্বাদ পেতেও মূল ভরসা। দলের সিনিয়ার সদস্য হিসেবে বিরাটও জানেন নিজের দায়িত্ব। প্রস্তুতির মাঝেই নিলেন সতীর্থের ক্লাস। কখনও কোহলির ক্লাসে রজত পাতিদার তো, কখনও ক্রুণাল, ফিল সল্ট। শুধু টিপস নয়, শ্যাডো করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
হেডকোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সঙ্গে ছোটখাটো বৈঠকও বাদ গেল না। কী বিষয়ে, দূর থেকে বোঝা মুশকিল। তবে লক্ষ্য যে শনিবার দ্বৈরথ, বলার অপেক্ষা রাখে না। বিরাটের ওপেনিং পার্টনার সল্টও লম্বা শটে ঝড় তোলার আভাস দিয়ে রাখলেন তাঁর প্রাক্তন আইপিএল হোম ইডেনে। আরসিবি-র জার্সিতে শনিবার নামবেন, নাইটদের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে।
দুই দলের প্র্যাকটিসের মাঝে ‘টিম ইংল্যান্ডের’ অন্যরকম ছবি। নাইট মইন আলির সঙ্গে মাঠের পাশেই চুটিয়ে আড্ডা সল্ট, লিভিংস্টোন, বেথেলদের। শনিবার ‘বন্ধুত্ব’ ভুলে পরস্পরকে নিশানা করা। বাইশ গজের যে টক্করে ইডেন বিরাটের নাকি রাসেলদের হয়, তারই প্রতীক্ষা।