বরুণ মজুমদার ও বিশ্বজিৎ সরকার, ডালখোলা ও রায়গঞ্জ: কী নামে আখ্যা দেওয়া যায় এই প্রেমকে? ছদ্মবেশী প্রেম? হয়তো তাই। রূপসাগরে ডুব দিয়ে দুই কিশোরী মজেছিল গভীর প্রেমে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রথমে বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে প্রেম। এরপর দুজনের মনেই উঁকি দেয় ঘর বাঁধার স্বপ্ন। স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে গত সোমবার আচমকা বাড়ি থেকে পালিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছে যায় দুই কিশোরী। ভোরের আলো ফুটলেই মন্দিরে গিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলবে, এমনই নাকি পরিকল্পনা ছিল যুগলের। কিন্তু তার আগেই উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) ডালখোলা (Dalkhola) থানার পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় দুজনে। ডালখোলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের এই ঘটনায় হতবাক বাসিন্দারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে বছর পনেরোর এক কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানানো হয়, তাদের কিশোরী মেয়েকে রায়গঞ্জ (Raiganj) থানা এলাকার অপর এক কিশোরী ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ দুই কিশোরীর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে উদ্ধার অভিযানে নামে। খবর আসে, তারা আশ্রয় নিয়েছে শিলিগুড়ির একটি বাড়িতে। রাতেই সেখানে হানা দিয়ে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে ডালখোলায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে জানা যায়, রায়গঞ্জের কিশোরীর এক দাদা থাকেন শিলিগুড়িতে। পালিয়ে গিয়ে সেই দাদার বাড়িতেই উঠেছিল তারা।
এদিন আদালতের মাধ্যমে দুজনকেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ডালখোলার কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, রায়গঞ্জের ওই কিশোরী আসলে মেয়ে। কিন্তু সে নিজেকে ছেলে বলে পরিচয় দেয়। তার বেশভূষা ও চালচলন ছেলেদের মতোই। আপাতভাবে তাকে মেয়ে বলে ঠাওর করা অসম্ভব। রূপ বদল করে ছেলে সেজেই সে সমবয়সি মেয়েদেরকে প্রেমের জালে ফাঁসায়।
অভিযোগকারী ওই মহিলা বলেন, ‘বছরখানেক ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে রায়গঞ্জের ওই কিশোরীর যোগাযোগ। ওই মেয়েটির মা-বাবা তাদের মেয়েকে ছেলে বলেই দাবি করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। প্রথমে সেই প্রস্তাবে আমরা রাজিও হই। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি, মেয়ের সঙ্গে যার বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি, সে আসলে ছেলে নয়। প্রকৃত অর্থে সে একটি মেয়ে। তারপর বিয়ে ভেস্তে দেওয়া হয়।’
পরিবারের তরফে বিয়ে ভেস্তে দিলেও দুই কিশোরীর প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটেনি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগও রেখে চলছিল দুজনে। কিন্তু বাড়ি থেকে পালিয়েও সাত পাকে বাঁধা হল না তাদের জীবন।
ডালখোলার নাবালিকার মায়ের দাবি, ছেলের ছদ্মবেশে ওই মেয়েটা আমার মেয়েকে প্রেমে ফাঁসিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার বা অন্য কোনও অসৎ কাজে লিপ্ত করতেই অপহরণ করে শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়েছিল। এই কাজে তার বাবা ও দাদারও ইন্ধন রয়েছে। এদিন রায়গঞ্জের ওই কিশোরীর গ্রামে গিয়ে অবশ্য তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির দরজায় ঝুলছিল তালা। প্রতিবেশীরা সেভাবে মুখ খুলতে না চাইলেও ওই ছদ্মবেশী কিশোরীর কথা শুনে কেউ কেউ জানালেন, ছোট থেকেই মেয়েটা ছেলেদের পোশাক পরে, চুল ছোট রেখে ছেলে সেজেই থাকতে ভালোবাসে।