রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: পর্যটক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের গাড়িগুলিকে সিকিমে গেলে আটকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সিকিমের গাড়ি অবাধে এ রাজ্যে ঘুরছে। রাজ্যের সঙ্গে করা পরিবহণ চুক্তি সিকিম মানছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়িতে দুই রাজ্যের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম পারস্পরিক পরিবহণ চুক্তি বা রেসিপ্রোকাল এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়ন নিয়ে বুধবার শিলিগুড়িতে (Siliguri) এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে যোগ দিতে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন সহ অন্য আধিকারিকরা শিলিগুড়িতে আসছেন।
বৈঠকে অংশ নেবেন সিকিমের পরিবহণমন্ত্রীর মুখ্য পরামর্শদাতা, পরিবহণ সচিব সহ অন্য আধিকারিকরা। থাকবেন শিলিগুড়ির মেয়র, ডেপুটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার এবং দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির জেলা শাসক, আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকরাও। বুধবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, এই বৈঠকের পাশাপাশি শিলিগুড়ির যানজট ও বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তর নিয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন মেয়র গৌতম দেব।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ রাজ্যের গাড়ি পর্যটক নিয়ে সিকিমে ঢুকতে গেলে সেখানকার প্রশাসন সমস্যা তৈরি করছে। গাড়ি থেকে পর্যটক নামিয়ে দিচ্ছে। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যালের দাবি, ‘সিকিম প্রশাসন রেসিপ্রোকাল চুক্তিকে মান্যতা দিচ্ছে না। আমাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে যদি সিকিমের গাড়ি সব জায়গায় ঘুরতে পারে, তাহলে আমাদের রাজ্যের গাড়িগুলিকেও সিকিমের সর্বত্র যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে। তা না হলে পর্যটকদের চরম হয়রানি হচ্ছে। বহু পর্যটক এ ধরনের হয়রানির জন্য এই ট্যুর প্যাকেজ বাতিল করে দিচ্ছেন। বুধবারের বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমকে (Sikkim) প্যাকেজ করে দেশ-বিদেশের প্রচুর পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। কিন্তু সিকিমে পশ্চিমবঙ্গ নম্বরের (ডব্লিউবি) গাড়ি ঢোকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা রয়েছে। অভিযোগ, এ রাজ্যের গাড়ি সিকিমে ঢোকার পরে রংপো, গ্যাংটক, নামচির মতো জায়গাগুলিতে পুলিশ গাড়ি আটকে দিচ্ছে। ফলে গাড়ি থেকে নেমে পর্যটকদের সিকিম নম্বরের (এসকে) গাড়িভাড়া করতে হচ্ছে। ফলে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। অথচ সিকিম নম্বরের গাড়ি শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, জয়গাঁ সহ কলকাতা সর্বত্র পর্যটক নিয়ে ঘুরছে। এই সমস্যা মেটাতে বাম আমলেও একাধিকবার সিকিমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণ দপ্তরের রেসিপ্রোকাল চুক্তি হয়েছে। রাজ্যে সরকার বদলের পর উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সিকিমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী পবনকুমার চামলিংয়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে সমস্যা মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এই সমস্যা মিটিয়ে রেসিপ্রোকাল চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য বুধবার শিলিগুড়ির স্টেট গেস্টহাউসে দুই রাজ্যের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে।
এদিকে, পরিবহণমন্ত্রী শহরে আসায় এখানকার যানজট সমস্যা নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন মেয়র গৌতম দেব। লোকাল বাসস্ট্যান্ড কোর্ট মোড় থেকে তিনবাত্তিতে স্থানান্তর, দূরপাল্লার ভলভো বাসগুলি জংশন থেকে সরিয়ে পরিবহণনগরীতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মেয়র বলেন, ‘এই দুটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে শহরের যানজট সমস্যা অনেকটাই মিটবে। পরিবহণনগরীতে বাসস্ট্যান্ড তৈরির জন্য কয়েক কোটি টাকার প্রয়োজন। সেটা মন্ত্রীকে জানানো হবে।’
