মালদা: ফাঁসির সাজা রদ হয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে। বুধবার বহরমপুরে কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সুশান্ত চৌধুরীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। নিম্ন আদালত সুশান্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যায় সুশান্তের পরিবারের লোকেরা। এরপরেই সুশান্তের ফাঁসির সাজা রদ করে নজিরবিহীন রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির নির্দেশ রদ করে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি নির্দেশ ৪০ বছরের আগে সাজা মাফ চেয়ে আবেদন করা যাবে না। অর্থাৎ ২০৬২ সালের মে মাসের আগে সাজা কমানোর আবেদন করতে পারবে না সুতপা খুনে দোষী সাব্যস্ত তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরী। সাধারণত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সংশোধনাগারে থাকাকালীন প্রত্যেক ১২ বছর অন্তর তারা কতটা সংশোধন হয়েছে তার ভিত্তিতে সাজা কমানোর আবেদন করতে পারে। তাই বুধবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে নজিরবিহীন বলা হচ্ছে। যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে খুশি নয় সুতপার পরিবার। আর ফাঁসির সাজা রদ হওয়াতে কিছুটা স্বস্তিতে সুশান্তর পরিবার।
প্রসঙ্গত ইংরেজবাজারের বাসিন্দা সুতপা চৌধুরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল পুরাতন মালদার তরুণ সুশান্ত চৌধুরীর। কিন্তু সুতপা পরবর্তীতে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে। প্রেমে প্রত্যাখ্যানের পরেই সুতপাকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত এবং উত্যক্ত করত সুশান্ত। তাই সুতপার পরিবার তাকে বহরমপুরে একটি কলেজে ভর্তি করে। গোড়াবাজারে একটি মেসবাড়িতে ভাড়া থাকত সে। কিন্তু মালদা ছেড়ে গেলেও মেলেনি রেহাই। নিজের প্রাক্তন প্রেমিকার বহরমপুরে থাকার খবর জানতে পেরে পিছু নেয় সুশান্ত। সেও সেখানে ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে এবং সুতপাকে গোপনে অনুসরণ করতে থাকে। সুতপা কে খুন করার জন্য একটি ছুরি এবং খেলনা বন্দুক কেনে। তারপর আসে সেই অভিশপ্ত সন্ধ্যা। সুতপার মেস বাড়ির সামনেই সুশান্ত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বাঁচানোর চেষ্টা করতে গেলে খেলনা বন্দুক দিয়ে ভয় দেখায়। সুতপার শরীরে ৪২ টি ক্ষতের চিহ্ন মিলেছিল। এই ঘটনায় ২০২৩ সালের ৩১ অগাস্ট বহরমপুর আদালত সুশান্ত কে ফাঁসির সাজা শোনায়। তারপরেই সুশান্তর আইনজীবী এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুতপার বাবা স্বাধীন কুমার চৌধুরী বলেন,”নিম্ন আদালতের রায়ে খুশি হয়েছিলাম। এই রায় আমরা মেনে নিতে পারছি না। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রাখছি যাতে এই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়।”
সুশান্তর ভাই সুরজিৎ চৌধুরী জানান,”সুতপার পরিবার যেভাবে আমার দাদার উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করেছিল। তারপর দাদা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। হতাশা এবং প্রতিশোধের স্পৃহা থেকে এত বড় ভুল করেছে। বয়স কম ছিল। ফাঁসির আদেশ রদ হওয়াতে স্বস্তি পাচ্ছি। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”