কল্লোল মজুমদার ও দীপঙ্কর মিত্র, মালদা ও রায়গঞ্জ: আগামীকাল রথ। মালদা ও রায়গঞ্জে রথের প্রস্তুতি (Ratha Yatra Preparation) চলছে তুঙ্গে। জগন্নাথ, বলরাম বা সুভদ্রা নন। রথে চড়ে মালদা শহর পরিক্রমা করেন স্বয়ং ব্রজমোহন আর রাধারানি। রথের সময় এমন রীতিতেই মাতেন মালদার মানুষ।
মালদার (Malda) ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার মধ্যে অন্যতম মকদুমপুরের রথ। পরিবারের দাবি, ওই রথের বয়স প্রায় ৫০০ বছর। কিন্তু একটু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মালদার এই রথ যাত্রার প্রচলন হয় ১৮৪০ সালে।
ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যায়, মালদা শহরে ডাক্তার বলে পরিচিত ঠাকুরদাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে তৈরি করেছিলেন ওই কাঠের রথ। এই রথটি তৈরি করেন একবর্ণা অঞ্চলের ১১ জন কাঠের মিস্ত্রি। ঠাকুরদাস ওই কাঠমিস্ত্রিদের তাঁর বাসভবনে রেখে ৬-৭ মাস ধরে ওই রথ তৈরি করিয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে।
তবে ব্রজমোহন মন্দিরের বর্তমান সেবাদাসী নূপুর রায় দাবি করেন, ‘৫০০ বছর আগে ওই বিগ্রহ দুটি নদীতে ভেসে আসে। সেই থেকে আমাদের পরিবারের হাতে পূজিত হয়ে এসেছেন। এর অনেক বছর পর স্বপ্নাদেশে রথ তৈরি হয়। ওই পরিবারের কাছে বিগ্রহ না থাকায় তিনি আমাদের পরিবারের কাছে এসে অনুরোধ করেন বিগ্রহের জন্য।’
একসময় ওই রথ টানা হত ফোয়ারা মোড় থেকে বিমল দাস মোড় পর্যন্ত। পরবর্তীতে ওই যাত্রাপথ পরিবর্তিত হয়ে বার্লো গার্লস স্কুল মোড় থেকে বিমল দাস মোড় পর্যন্ত হয়। দীর্ঘদিন এই যাত্রাপথ বজায় থাকলেও সম্প্রতি বাশুলিতলার বাসিন্দাদের অনুরোধে যাত্রাপথ বিমল দাস মূর্তি মোড় থেকে পরিবর্তিত হয়ে গৌড় রোড অবধি হয়েছে।
স্থানীয় দেবাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘ওই রথের বয়স কত হল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে আমরা ছেলেবেলা থেকেই দেখে এসেছি।’ এই মেলার মূল আকর্ষণ নিখুঁতি নামের এক ধরনের ছোট মিষ্টি। যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে গুটলিমোহন নামেও পরিচিত। মকদুমপুরের ওই জায়গাটি রথঘর নামে খ্যাত বলে জানিয়েছেন আরেক বাসিন্দা মন্মথ সাহা। পুরোহিত প্রদীপ ঝার কথায়, ‘রথের দিন ব্রজমোহন ও রাধারানিকে মাসিরবাড়ি নিয়ে এসে সাতদিন ধরে চলে পুজো অনুষ্ঠান। মন্দিরে লুচি ভোগ দিয়ে পুজো হয়। পুজোর দিন প্রথা মেনে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়।’
পাশাপাশি, দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে প্রথা মেনে রায়গঞ্জের (Raiganj) দেবীতলায় রথে বসানো হয় রাধাগোবিন্দের বিগ্রহ। রথ উৎসব কমিটির প্রবীণ সদস্য গৌরগোপাল সাহা বলেন, ‘দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে আসার সময় যে রাধাগোবিন্দের বিগ্রহটি আমরা নিয়ে এসেছি, সেটি দেবীতলায় স্থাপন করা হয়। রথের দিন বিগ্রহটি রথে বসিয়ে এলাকায় ঘোরানো হয়।’ পূর্ববঙ্গের রীতি মেনেই রথে থাকে না জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। আগে বাঁশের রথ থাকলেও এখন হয়েছে কাঠের রথ।
অন্যদিকে, রায়গঞ্জ (Raiganj) শহর তথা জেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম হল শহরের উকিলপাড়ার বিশ্বাসবাড়ির রথ। প্রায় ৭০ বছর আগে এই বিশ্বাসবাড়ির কর্তা কালীপদ বিশ্বাস এখানে রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এবারে বিশ্বাসবাড়ির রথযাত্রা উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হল বড় আকারের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহের শহর পরিক্রমা।