Raiganj | ‘বিষ’ জলে তৃষ্ণা নিবারণ, নমুনা পরীক্ষায় ‘ফিকাল কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়ার হদিস

Raiganj | ‘বিষ’ জলে তৃষ্ণা নিবারণ, নমুনা পরীক্ষায় ‘ফিকাল কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়ার হদিস

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: পানীয় জলে মারণ বিষ! রায়গঞ্জ (Raiganj) ব্লকের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েলের জলের নমুনা পরীক্ষায় ‘ফিকাল কলিফর্ম’ ব্যাকটিরিয়ার হদিস মিলতেই জাঁকিয়ে বসেছে আতঙ্ক। যে ব্যাকটিরিয়া মানুষের মলে থাকার কথা তা পানীয় জলে এল কেমন করে? কারণ জানতে গিয়ে হাতে এসেছে শিউরে ওঠার মতো তথ্য। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের (পিএইচই) কর্তাদের সন্দেহ, উন্মুক্ত শৌচালয়ের মলমূত্রের সঙ্গে নলকূপের জলস্তর মিলে যাওয়াতেই ভয়াবহ এই বিপত্তি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘জলের মধ্যে ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটিরিয়া থাকলে সেই জল খাওয়া উচিত নয়। এই জল খেলে লিভারে ইনফেকশন, স্টমাক ইনফেকশন, কিডনিতে ইনফেকশন সহ একাধিক রোগ বাসা বাঁধতে পারে। ‌ জলের মধ্যে ব্লিচিং পাউডার সহ একাধিক কেমিকেল ব্যবহার করে জলকে দূষণমুক্ত করে খাওয়া উচিত। এছাড়াও জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তারপর খাওয়া উচিত। নচেৎ এই ব্যাকটিরিয়ার জেরে একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ কেন শুরু হয়নি এলাকায়? রায়গঞ্জ শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। রয়েছে পাকা রাস্তা, হাইস্কুল। দীর্ঘদিন ধরেই গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোয়ালদহ, যুগিয়ামের অনন্তপুর, ভিটিহার, দুপদুয়ার, রহমতপুর, বিষাহার এলাকার বাসিন্দাদের পেটের রোগ লেগেই রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের জলবন্ধু বিশু মহম্মদ প্রতিটি গ্রাম সংসদ থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে কর্ণজোড়ায় পরীক্ষাগারে জল পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি জলের নমুনাতেই বিপজ্জনক ‘ফিকাল কলিফর্ম’ ব্যকটিরিয়ার উপস্থিতি। একশো মিলিলিটার জলে ২০-৬০টি ব্যাকটিরিয়া মেলায় চিন্তা আরও বেড়েছে। জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের ব্যাকটিরিয়া জলে একটি থাকলেই বিপদ। সংগ্রহ করা জলের নমুনায় যে মাত্রায় ব্যাকটিরিয়ার হদিস মিলেছে তা অত্যন্ত মারাত্মক। পিএইচই দপ্তরের আধিকারিক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘কাঁচা শৌচালয়ের মলমূত্রের সঙ্গে নলকূপের জল মিলে যাওয়াতে বিপত্তি ঘটেছে।’

কী হতে পারে এই ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণে? জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ‘ফিকাল কলিফর্ম’ ব্যাকটিরিয়া বিপজ্জনক। এটি থেকে কলেরা, ডায়ারিয়া, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বিপদ বাড়ে।’ এলাকা ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি বাড়ির লোকজন পেটের রোগে ভুগছেন। পানীয় জলে বিষ ছড়াল কীভাবে? উন্মুক্ত শৌচালয়ের ৫ থেকে ১০ মিটার দূরে রয়েছে বাড়ির নলকূপ। পিএইচই দপ্তর সূত্রে খবর, নলকূপের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০০ ফুট গভীর থেকে জল তোলার নিয়ম। কিন্তু ওই এলাকার নলকূপগুলির গভীরতা সর্বোচ্চ ৩০ ফুট। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার পানীয় জলে আয়রনের পরিমাণ ৪.৯ পিপিএম এবং ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ ৯.৭ পিপিএম মিলেছে যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রুমা পারভিন বলেন, ‘এলাকার সবক’টি গ্রামের টিউবওয়েলগুলির জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্টেই ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটিরিয়া ও দুই খনিজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মিলেছে। দূষিত জল খেতে নিষেধও করা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামবাসী সেই জল পান করছেন।’

প্রতিবছরই এই এলাকার ৩০০-৪০০ গ্রামবাসী পেটের অসুখের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। সম্প্রতি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে খেয়ে ৪০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারপরেই পিএইচই’কে সমীক্ষা করার কথা বলা হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *