রায়গঞ্জ: টানা তিন বছর হয়ে গেলও রায়গঞ্জ পুরসভার ভোট নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেই সরকারের। পুরসভা চালাচ্ছেন সরকার মনোনীত চেয়ারপার্সন। কাউন্সিলাররা নিজ নিজ ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব পেলেও কার্যত উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছেন না। তাই এবার রায়গঞ্জ পুরভোটের দাবি তুললেন খোদ তৃণমূলের দুই কোঅর্ডিনেটর তথা প্রাক্তন কাউন্সিলার।
গত ২০১৭ সালের জুন মাসে রায়গঞ্জ পুরসভার নির্বাচন হয়। তৃণমূল এই পুরসভায় প্রথম ক্ষমতায় আসে। ২০২২ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর রাজ্য সরকার সন্দীপ বিশ্বাসকে চেয়ারপার্সন ও অরিন্দম সরকারকে ভাইস চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব দেয়। বিদায়ি কাউন্সিলাররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব পান।
অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার প্রায় ৩ বছর পরেও নির্বাচন না হওয়ায় প্রতি পদে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে কোঅর্ডিনেটরদের। ওয়ার্ডের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধানে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে পুর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা।
১৭ নম্বর ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর তথা মহিলা সভানেত্রী চৈতালি ঘোষ সাহার অভিযোগ, ‘আমরা আমাদের অভিযোগ জানাতে পারছি না। যদি নির্বাচন হয়ে নতুন বোর্ড গঠিত হয় তবে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। উন্নয়নমূলক কাজ ধারাবাহিক চলবে। দল কাকে টিকিট দেবে, সেটা আমার কাছে চিন্তার ব্যাপার নয়। মানুষ যাতে ভোট দিয়ে পাঠাতে পারেন, সেই জায়গাটা তৈরি হোক। সেজন্য পুরসভার ভোট জরুরি।’
অন্যদিকে, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘ভোট হলে ভালো হয়। আমরা কোঅর্ডিনেটর হিসেবে থাকায় আমাদের বক্তব্য সব জায়গায় বোঝানো সম্ভব হয় না। কাউন্সিলার হলে আমারও একটু সুবিধা হয়।’
বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর দাবি, ‘রায়গঞ্জবাসীর সুবিধার্থে সময়মতো পুরভোট হওয়া প্রয়োজন ছিল। ভোটের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’ রায়গঞ্জ পুরসভার ভোট নিয়ে সুর চড়িয়েছে সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো বিরোধীদলগুলিও। অভিযোগ, ২০১৭ সালে সন্ত্রাস করে পুর বোর্ড দখল নিয়েছিল তৃণমূল। সাধারণ নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম পালের অভিযোগ, ‘নাগরিক পরিষেবার স্বার্থে অবিলম্বে স্বচ্ছভাবে পুরভোট হওয়া প্রয়োজন। তবে ২০১৭ সালের মতো সন্ত্রাস করে ভোট হলে লাভ হবে না শহরবাসীর।’ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদিকা ফাল্গুনী চক্রবর্তীর দাবি, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পুরভোটের দাবি জানিয়ে আসছি। ভোট হলে তৃণমূল ক্ষমতায় আসবে না বলেই ভোট করাতে সাহস পাচ্ছেন না।’ এতদিন বিরোধীরা পুরভোটের দাবিতে সরব হলেও এবার শাসকদলের কোঅর্ডিনেটররা সরব হওয়ায় কৌতূহল বেড়েছে রায়গঞ্জবাসীর।