রায়গঞ্জ: দেড় ফুট উচ্চতার ৩২ বছরের দাদা। হাঁটতে পারে না। কোনও রকমে ঠেস দিয়ে বসতে পারে। এক জায়গা থেকে কোলে করে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে হয়। এহেন বিশেষভাবে সক্ষম দাদাকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম ও বাড়ির ছোট্ট গালামালের দোকান সামলাচ্ছেন বোন। রায়গঞ্জ (Raiganj) শহরের শক্তিনগরের এই ভাই বোনের লড়াই অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা।
দাদা সোনু গুপ্তা (৩২) জন্ম থেকেই শারীরিক সমস্যা নিয়ে চলছেন। দেড় ফুট উচ্চতার জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সোনু। তবে তার একমাত্র ভরসা ছোটো বোন নেহা। ২০২০ সালে মা আরতি গুপ্তা মারা যাওয়ার পর সংসারের সব দায়িত্ব বোন নেহার উপর এসে পড়েছে। দাদাকে কোলে নিয়েই সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাড়ির ছোট্ট গালামালের দোকান চালাতে হয় নেহাকে। দাদার পড়াশোনা ও দেখভালের জন্য নিজের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে নেহার। তবুও মুখে হাসি নিয়ে একটাই কথা, আমি না দেখলে দাদাকে দেখার কেউ নেই। এদিকে বাবা বাবলু গুপ্তা রায়গঞ্জের একটি বেসরকারি হোটেলে কাজ করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। তাই দোকানের খরিদ্দার সামাল দেওয়ার পাশাপাশি দোকানের মাল নিয়ে আসা, রান্নাবান্না ও দাদার যাবতীয় দায়িত্ব তাকেই সামলাতে হয়। নেহা জানান, তাঁর দাদা, এক হাজার টাকা মানবিক ভাতা পেলেও অন্য কোনও সরকারি সাহায্য পান না। তবুও বাঁচার লড়াই করতে হচ্ছে। দুজনেই সরকারি চাকরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে জানেন না আগামী দিনে কী হবে।
ভাই বোনের পাশে সহানুভূতি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Raiganj College) অধ্যাপক দেবাশিস বিশ্বাস। তিনিই সোনুর পড়াশোনার বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নেন। সোনু জানান, মা মারা যাওয়ার পর বোন একমাত্র ভরসা। পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। সরকার যদি পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাদের সুবিধে হয়।