সময়টা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের। বিভিন্ন কাজে মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন তখন ক্রমশ বাড়ছে। সেই সময় তৎকালীন সুদূর বর্মাদেশ থেকে দার্জিলিং মেলে করে সেই সময়কার অত্যাধুনিক একটি মুদ্রণযন্ত্র (Printing Machine) হিলিতে (Hili) আসে। তারপর সেখান থেকে গোরুর গাড়ি করে ব্যাংকের কাজের জন্য বালুরঘাটে এসে পৌঁছায় ছাপার যন্ত্রটি। আটের দশকের শেষেরদিক পর্যন্ত মুদ্রণযন্ত্রটি কার্যকর অবস্থায় ছিল। এটি একসময় সমস্ত উত্তরবঙ্গের যাবতীয় কাগজপত্রের কাজ একাই সামলাত। একাধিক সরকারি কাজ থেকে শুরু করে সেবামূলক কাজে মুদ্রণ করেছে এই যন্ত্রটি। এমনকি নির্বাচনের ব্যালট পেপারও এই যন্ত্রের সাহায্যে ছাপা হত বলে জানা যায়। কিন্তু এর সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের সিংহভাগ এখনও অজ্ঞাত।
বালুরঘাটে (Balurghat) রয়েছে স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত দিনাজপুরের প্রথম মুদ্রণযন্ত্র। বালুরঘাটের দক্ষিণ দিনাজপুর ডিস্ট্রিক্ট সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাংকের ভেতরে ঢুকলেই এক কোনায় নজরে পড়বে প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটি। বালুরঘাটে কাছারি রোড এলাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পার্কিং শেডের নীচে রয়েছে সম্পূর্ণ কালো রংয়ের এই মুদ্রণযন্ত্র। যা ১০০ বছরের বেশি পুরোনো। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফে মুদ্রণযন্ত্রের নীচে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে ও ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে মাথার উপর আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এর ইতিহাসের কথা বালুরঘাট তথা জেলাবাসীর অনেকের কাছেই কার্যত অজানা রয়ে গিয়েছে। বর্মাদেশ থেকে মুদ্রণযন্ত্রটি জাহাজে করে কলকাতায় পৌঁছেছিল। তারপর সেখান থেকে দার্জিলিং মেলে করে হিলি পৌঁছায়। সেখান থেকে বালুরঘাট এসে পৌঁছায় মুদ্রণযন্ত্রটি। এটি জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী সম্পদ।
১৯১৫ সালে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরে মুদ্রণযন্ত্র আনার জন্য পরিকল্পনা শুরু করা হয়। যা তৎকালীন ব্যাংক ডিরেক্টরের মাধ্যমে সাত বছর পর বালুরঘাটে এসে পৌঁছায়। দিনাজপুরের পাশাপাশি সমগ্র উত্তরবঙ্গের কাজ এই মুদ্রণযন্ত্রের মাধ্যমেই হত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকলেও তা মিউজিয়ামের হাতে তুলে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন ইতিহাস গবেষকরা। সেখানে ভালো ডিসপ্লের মাধ্যমে সেটিকে সাজিয়ে রেখে তার নীচে সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখে রাখা উচিত।