শিলিগুড়ি: আকাশে মেঘ জমতেই ভীত হচ্ছে পাহাড়। আশঙ্কা জমাট বাঁধছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH10) নিয়েও। ফি বছরই পাহাড়ে বর্ষার সঙ্গী ধস, ভূমিধসে রাস্তার ক্ষতি এবং বিপর্যস্ত জনজীবন। এক রাতের বৃষ্টি, বৃহস্পতিবার মূলত কালিম্পং (Kalimpong) পাহাড়ে এমনই সমস্ত বিপদকে একসঙ্গে হাজির করেছে। টানা বৃষ্টি এবং তা যদি ভারী থেকে অতি ভারী হয়, তবে পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছাতে পারে, তা ভাবতে গিয়ে আশঙ্কিত হচ্ছেন পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলের অনেকেই। রবিবার থেকে টানা তিনদিনের জন্য ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহার বক্তব্য, ‘এই অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জলীয় বাষ্পের জোগান ঘটায়, হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলাতেই রবিবার থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।’ এদিকে, এদিন মেল্লিতে বৃষ্টির জেরে স্কুটি নিয়ে তিস্তায় পড়ে যান দুই তরুণ। বিকেল পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ মেলেনি।
লিকুভিরে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে বোল্ডার। যে কারণে পরিস্থিতি বুঝে এখানে যান চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। মেল্লি এবং কিরণের মধ্যে রাস্তাটির বড় একটা অংশ অনেকটাই বসে গিয়েছে। ফলে এখান দিয়ে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কালিম্পং জেলা পুলিশ। প্রবল বর্ষণের জেরে এমন পরিস্থিতি, বলছে জেলা প্রশাসন। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য এদিন জাতীয় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। একেই বৃষ্টি, তার মধ্যে যানজট, ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই পথের যাত্রীদের। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কালিম্পংয়ে বৃষ্টি হয়েছে ১০৪.৬ মিলিমিটার। এক রাতের এমন বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতি হলে, অতি ভারী বৃষ্টির ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অনেকেই। অধিকাংশরই আশঙ্কা, ফের বন্ধ হয়ে যাবে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বর্তমানে জাতীয় সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এনএইচআইডিসিএল। গত কয়েক মাস ধরেই সড়কে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সড়ক সংস্থাটি। ওই কাজের জন্য প্রায়দিন রাস্তাটি বন্ধ রাখা, যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এদিনের রাস্তার পরিস্থিতি দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, কাজ হলটা কোথায়? হলে এতদিন কী কাজ হল? কালিম্পংয়ের বাসিন্দা রবীন থাপা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংস্থা রাস্তা মেরামতির দায়িত্ব নেওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু যা দেখলাম, তাতে নিশ্চিত এবছরও ভোগাবে রাস্তাটি।’
শুধু ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক নয়, বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭১৭ এ জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গা। চুইখিম বস্তির সেতুর কয়েকটি পিলার এলাকায় ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের বক্তব্য। ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ৭১৭ এ জাতীয় সড়ক দিয়ে একসঙ্গে যদি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সিকিম। চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে কালিম্পংকেও।