রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: আগে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (NBMCH) জরুরি বিভাগে শুধুমাত্র রোগীর নাম নথিভুক্তি এবং প্রাথমিক পরীক্ষা করার ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে সেই পরিষেবা অনেকটাই বাড়িয়ে সেখানে তিনটি শয্যাও পাতা হয়েছে। সর্বক্ষণের জন্য একাধিক চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পর্যন্ত রয়েছেন। তার পরেও সংকটজনক অবস্থায় আসা রোগীরা সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ বাড়ছে।
হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলছেন, ‘চিকিৎসক, নার্স সবসময় গুরুত্ব দিয়েই রোগীদের চিকিৎসা করেন। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পেলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দু’দিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে সেটিরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
গত বুধবার ফাঁসিদেওয়ার বাসিন্দা এক মহিলাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ওই রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার জন্য ট্রলি পাওয়া যায়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরিবারের অভিযোগ, একাধিকবার জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সকে গিয়ে ট্রলি না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে রোগীকে বাইরে গিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কেউই পরিবারের আর্জি শোনেননি। যার ফলে দীর্ঘক্ষণ বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য মহঃ আলম শুক্রবার বলেন, ‘আমরা রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিল। ট্রলি ছিল না, ডাক্তাররাও কেউ দেখতে আসেননি। যদি একটু চিকিৎসার সুযোগ পেত তাহলে হয়তো বেঁচে যেত।’ এর আগেও জরুরি বিভাগে এমন ঘটনা ঘটেছে। শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক জ্যোতির্ময় পাল বলেছেন, ‘মেডিকেলে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ অমানবিক চিত্র দেখছি। কিছু চিকিৎসক ছুটি কাটানোর বাহানায় কলকাতা থেকে দু’একদিনের জন্য এখানে এসে হাজিরা দিয়ে আবার ফিরে যান। আর মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক, নার্স সহ অন্য কর্মী বেড়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
মেডিকেল কর্তারা অবশ্য চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, আগে জরুরি বিভাগে সংকটজনক রোগী এলেই তাঁকে ক্যাজুয়াল্টি বিভাগে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হত। এখন জরুরি বিভাগে রেখে, স্যালাইন ওষুধ দিয়ে অনেক রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হয়। দু’একটি ক্ষেত্রে রোগীর পরিবার পরিজনরা অভিযোগ করেন, কিন্তু সবটা সঠিক নয়।