Medication smuggling | শিলিগুড়িজুড়ে মাদক সাম্রাজ্য, ঢাল ‘রানি’রাই

Medication smuggling | শিলিগুড়িজুড়ে মাদক সাম্রাজ্য, ঢাল ‘রানি’রাই

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


কার্তিক দাস, খড়িবাড়ি : শাড়ির আঁচলের তলায় লুকোনো পুরিয়া। মধ্যবয়সি মহিলার সতর্ক চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। ঠিকঠাক খদ্দের পেলেই হল। দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলেন এক পুলিশকর্তা। কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা নেই তাঁর। কারণ সঙ্গে মহিলা পুলিশকর্মী না থাকায় আইনের গ্যাঁড়াকলে পড়লে ফাঁসতে হবে তাঁকেই। এমন ঘটনা আকছার ঘটে। আর এই সুযোগেই হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে ব্রাউন সুগার। নেপাল সীমান্ত লাগোয়া পানিট্যাঙ্কি, খড়িবাড়ি, নকশালবাড়িতে তো ঘরে ঘরে এখন মাদকশিল্প।

সীমান্তে ড্রাগসের অন্ধকার কারবারে প্রথম আলো ফেলেছিল উত্তরবঙ্গ সংবাদই। তারপর থেকেই পুলিশ কিছুটা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছে। মাদকের কারবারে জড়িয়ে ধরাও পড়েছে বহু। কিন্তু রাঘববোয়ালদের ছোঁয় কে! এক পুলিশকর্তা তো হতাশ হয়ে বলেই ফেললেন, ‘মহিলাদের সামনে ঠেলে দিলে আমাদের কী করার থাকতে পারে বলুন তো!’

পুলিশকে ফাঁকি দিতে মাদক পাচার ও বিক্রিতে এখন নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে সিন্ডিকেট। এই কারবারে বেশি করে শামিল করা হচ্ছে গৃহবধূদের। সূত্রের খবর, স্বামী-স্ত্রী সেজে সঙ্গে একটি শিশুকে নিয়ে স্কুটারে চেপে মাদক বিক্রি করছে একটি চক্র। একঝলকে দেখে বোঝার উপায় থাকছে না, এরাই যে আসলে পেডলার। তাছাড়া সঙ্গে মহিলা থাকলে তরুণী খদ্দের পাওয়াটাও সহজ। এখানেই শেষ নয়, কারণ আছে আরও ঢের।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বাড়ির পুরুষরা আড়ালে থেকে কারবার চালাচ্ছে। সামনে ঢাল করে রাখা হচ্ছে বাড়ির মহিলাদের। কিন্তু কেন? পুলিশেরই ব্যাখ্যা, আচমকা অভিযানে অনেক সময় মহিলা কর্মী থাকে না। আর সেই সুযোগে মহিলারা বাড়ির গেট আগলে দাঁড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি মাদক বিক্রির ঠেকে হানা দিলে বাড়ির মহিলারা নিজেদের কাপড় ছিঁড়ে পুলিশকে শ্লীলতাহানির ভয়ও দেখায়। কিছুদিন আগে এসএসবির অভিযান চলাকালীন এক মহিলা আবার নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। স্বাভাবিকভাবে দুটি ক্ষেত্রেই বিপাকে পড়ে পুলিশ ও এসএসবি। আবার রাতের অভিযানে মহিলাদের গ্রেপ্তার করা যায় না। ফলে সেক্ষেত্রেও ছাড় পেয়ে যায় কারবারিরা।

পানিট্যাঙ্কি এলাকার গৌড়সিংজোত, ওয়ারিশজোত, গণ্ডগোলজোত, পানিট্যাঙ্কি বাজার সংলগ্ন এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, পুরাতন রোড সংলগ্ন এলাকা, বুড়াগঞ্জের চরনাজোত প্রভৃতি এলাকায় শতাধিক দোকান এবং বাড়ি এখন মাদক বিক্রির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। খড়িবাড়ি ও নকশালবাড়িতেও একশোর ওপর বাড়িতে চলছে কারবার।

সূত্রের খবর, চিন থেকে মায়ানমার, অরুণাচল, মণিপুর হয়ে মালদার মোথাবাড়ি এলাকায় ফাইন কোয়ালিটির ব্রাউন সুগার আসে। সেখানে তা প্রক্রিয়াকরণের পর পানিট্যাঙ্কি ও চরনাজোতের সাব-স্টকিস্টদের কাছে পৌঁছায়। তখন এক গ্রাম ব্রাউন সুগারের দাম হয় ১২০০-১৫০০ টাকা। এক গ্রাম ব্রাউন সুগারকে দশ ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট পুরিয়া তৈরি করা হয়। একটি পুরিয়া খোলাবাজারের ড্রাগ পেডলাররা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করে।

একটি তথ্য বলছে, প্রতিদিন স্থানীয় ও বহিরাগত মিলিয়ে অন্তত ৫০০০ মাদকাসক্ত পানিট্যাঙ্কি ও সংলগ্ন এলাকায় মাদক গ্রহণ করে। ৫০ ও ১০০ গ্রামের প্যাকেট বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাদক পাচার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ কেজি ব্রাউন সুগার শুধু পানিট্যাঙ্কি থেকেই বিক্রি হচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে বেকার তরুণ-তরুণীদের একাংশও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এক গোয়েন্দাকর্তার মতে, চিকেন নেক এলাকার যুবসমাজকে মাদকাসক্ত করে তুলতে পারলে সীমান্ত এলাকার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে। সেই কারণেই এই এলাকাকে মূল টার্গেট করছে বিদেশি শক্তি।

এলাকায় মাদক কারবার রুখতে পুলিশ সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ। মাদক কারবারিদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছেও আর্জি জানিয়েছেন তিনি। সেইজন্য একটি মোবাইল নম্বরও শেয়ার করেছেন। কিন্তু বাস্তব হল, জল এখন মাথার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। যেখানে মহিলারাই মোটা টাকার লোভে কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন, সেখানে পুলিশ সুপারের বার্তা কতটা কাজ করবে তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়দের একাংশই।

পুলিশ সুপার অবশ্য জানিয়েছেন, মহিলা কারবারিদের শায়েস্তা করতে খুব দ্রুত বিশাল মহিলা র‌্যাফ মোতায়েন করা হবে পানিট্যাঙ্কি এলাকায়। পাশাপাশি থাকবে পুরুষ র‌্যাফ। তাঁর কথা, ‘যে কোনও মূল্যেই পানিট্যাঙ্কি  মাদকমুক্ত এলাকা করা হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *