অরিন্দম বাগ, মালদা: মালদা মেডিকেলে (Malda Medical Faculty & Hospital) ইন্টার্নদের মধ্যে বিবাদকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল জাতীয় মহিলা কমিশন। এমনকি এই ঘটনায় জড়িত সকলকে জবাবদিহি করতে হবে বলে সাফ জানিয়েছে কমিশন। নারীদের সুরক্ষার সঙ্গে যে কোনও আপস নয়, সেকথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে কমিশন।
গত ২১ অগাস্ট মালদা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি সার্জিক্যাল বিভাগে কর্মরত দুই পড়ুয়া চিকিৎসকের বিবাদ থেকে ঘটনার সূত্রপাত। সেসময়ে এক পড়ুয়া চিকিৎসককে রেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারারাত মেডিকেলে ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়েছিল বিবাদে সরাসরি জড়িয়ে পড়া পড়ুয়া চিকিৎসক ময়ূরাক্ষী ঘোষ সহ তাঁর সহযোগীদের। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ময়ূরাক্ষী। অবশেষে সেই ঘটনার তদন্তে মালদায় এল জাতীয় মহিলা কমিশন। সোমবার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে করে মালদায় পৌঁছায় মহিলা কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডাঃ অর্চনা মজুমদার।
মালদা মেডিকেলে পৌঁছে প্রথমেই মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। পরে বিবাদে জড়িয়ে পড়া তিন পড়ুয়া চিকিৎসকের সঙ্গে একে একে কথা বলেন। শেষে মেডিকেলের তদন্তকারী কমিটি ও অন্য আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা।
এদিন ময়ূরাক্ষী ঘোষ বলেন, ‘মহিলা কমিশনের সদস্য আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। এতদিন আমার সঙ্গে যা যা ঘটেছে, আমি তা জানিয়েছি। আমার কাছে যা যা প্রমাণ ছিল, তা দিয়েছি। পোস্টারিং নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছে মহিলা কমিশন। আমি চাই দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমাকে নানাভাবে বদনাম করা হয়েছে। এখনও আমি মানসিকভাবে স্টেবল হতে পারিনি। যদি আমার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়, তবে আমি কাজে যোগদান করব।’
এদিকে আরেক পক্ষের মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি নিজের বক্তব্য জানিয়েছি। মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আমাকেও শোকজ করেছে। আমি নির্দিষ্ট সময়ে আমার জবাব দেব। আমি চাই তদন্ত কমিটি সঠিক বিচার করুক।’
এদিকে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন, ‘দুজন পড়ুয়া চিকিৎসকের ব্যক্তিগত বিবাদ এতদূর পৌঁছে গেল, যেখানে একজন মহিলাকে সারারাত কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ঘেরাও করে রাখা হল। এই ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে একজন মহিলার ছবি দিয়ে ওয়ান্টেড পোস্টার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। কমিশন মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সিরিয়াস। প্রথমে আরজি কর, তারপর ল’ কলেজ, এবার মালদা মেডিকেল। মহিলাদের সম্মান, সুরক্ষা কোনওভাবেই আমরা ক্ষুণ্ণ হতে দেব না।’
ক্ষোভের সুরে কমিশনের সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ, নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতিতে একজন মহিলা ডাক্তারকে যদি সারারাত ঘেরাও হয়ে থাকতে হয়, তবে মহিলাদের সুরক্ষা কোথায়? এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে উত্তর দিতে হবে। মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে, পুলিশকে, ওই দিন ওই ঘরে যারা এসেছিল, সকলকে জবাব দিতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করে এই ধরনের ঘটনা আটকাতে, আমাদের যতদূর যেতে হয় আমরা ততদূর যাব।’