অরিন্দম বাগ, মোথাবাড়ি: সকাল নটা। মালদার (Malda) মোথাবাড়ি (Mothabari) এলাকার লোকজন তখন স্বাভাবিক ছন্দে। কেউ বাজার করছেন, কেউ কর্মস্থলের দিকে ছুটছেন। পড়ুয়াদের কেউ কেউ আবার টিউশন শেষে বাড়ি ফিরছে। সেই পুরোনো গতিতে। বিভিন্ন পাড়ায় বিভিন্ন ছবি দেখা দিলেও সব জায়গায় যে একই ছবি ধরা পড়েছে তা হল পুলিশি নিরাপত্তা।
মোথাবাড়ি হরিবাসর মন্দিরে মঙ্গলবার থেকে ৩২ প্রহরব্যাপী সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়েছিল। সকাল থেকে কমিটির লোকজন কীর্তনের কাজে ব্যস্ত। আয়োজক কমিটির এক সদস্য জানান, ‘পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক। গতকাল আমরা পদযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেছি। প্রশাসন আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে।’
এক সপ্তাহ হতে চললেও এখনও ঘটনার রেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছেন পুলিশকর্মী, র্যাফ, সিভিক ভলান্টিয়ার। পুলিশের থেকে পুরোপুরি আলাদাভাবে ২৪ ঘণ্টা পেট্রোলিং চালাচ্ছে বিএসএফও। এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে মোথাবাড়ি। তবে বেশ কিছু এলাকার মানুষের মনের মধ্যে আতঙ্কের একটা কাঁটা যেন এখনও আটকে রয়েছে।
সকাল দশটায় মোথাবাড়ি স্ট্যান্ডে নিত্যদিনের ব্যস্ততা। জায়গায় জায়গায় মোতায়েন থাকা পুলিশকর্মী কিংবা র্যাফ নজরে না এলেও আর পাঁচটা দিন থেকে ফারাক খুঁজে বের করা কার্যত অসম্ভব। বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মণ্ডলবাবু। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে এলাকা থমথমে ছিল। গত দু’দিন ধরে এলাকা পুরো ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিএসএফ টহল দিচ্ছে। দুই পক্ষকে নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা বৈঠক করেছেন। আশা করছি আরও দু-তিন দিনে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ মোথাবাড়ি চৌরঙ্গি মোড়ের এক বিক্রেতা দেবাশিস সাহা জানান, ‘ঘটনার জেরে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতি থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
যে এলাকার মিছিল নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত, সেই রায়পাড়া এলাকার মহিলারা এখনও আতঙ্কে রয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে পাশে পেয়েই একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন ওই মহিলার দল। তঁাদের দাবি, তাঁদের কেউই বাড়ির বাচ্চাদের বাইরে একা ছাড়তে সাহস পাচ্ছেন না। কলে জল ভরতে গিয়ে বাড়ির মেয়েদের গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে। এই বিষয়গুলোতেও প্রশাসনিক দৃষ্টি চাইছেন তাঁরা। একই পরিস্থিতি আদর্শনগর এলাকায়।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কমিশনের কিছু সদস্যকে নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মালদা আসছেন। বিকেলেই মোথাবাড়ি এলাকার উদ্বিগ্ন মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে যাবেন।
এদিকে আগামী রবিবার রামনবমীর দিকে নজর এলাকাবাসীর। ইতিমধ্যে ৯৫ বছরের পুরোনো মন্দির চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মিছিল নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও এলাকায় যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুরো এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। রামনবমী যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন হয় তার জন্যও আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
বুধবারও মোথাবাড়ি এলাকায় বিএসএফকে পেট্রোলিং চালাতে দেখা গিয়েছে। কর্তব্যরত বিএসএফ কর্মীরা দাবি করছেন, ‘ওপরমহলের নির্দেশে তাঁরা ২৪ ঘণ্টা পেট্রোলিং চালাচ্ছেন। পরিস্থিতির সমস্ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।’