অরিন্দম বাগ, মালদা: ঠিক যেন বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘গব্বর’ সিনেমার চিত্রনাট্য। যেখানে মৃত রোগীকে চিকিৎসার নামে শুধুই টাকা হাতানোর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় ফেলে দেন সিনেমার নায়ক। মালদা শহরে এক প্রাক্তন আরপিএফ কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তেমনই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কাঠগড়ায় শহরের একটি নার্সিংহোম। মৃত্যুর সঠিক সময় নিশ্চিত করতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবারের লোকজন।
মৃত আরপিএফ কর্মীর নাম প্রবীরচন্দ্র শূর (৬৩)। বাড়ি মালদা শহরের ঝলঝলিয়া দেশবন্ধুপাড়া এলাকায়। স্ত্রী ছাড়াও বাড়িতে রয়েছেন তিন মেয়ে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৩ দিন আগে প্রবীরবাবুর ব্রেন স্ট্রোক হয়। সেইসময় তঁাকে রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তঁাকে রেফার করা হয় সিঙ্গাতলা এলাকার একটি নার্সিংহোমে। অভিযোগ, সেদিন থেকেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। আর সেই অবস্থায় প্রবীরবাবুর তিনটি অপারেশন করা হয়। অপারেশন করার জন্য এখনও পর্যন্ত পরিবারের লোকজন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। শনিবার সকালে প্রবীরবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
এক আত্মীয় তথা রেড ভলান্টিয়ার্সের সদস্য গোপা চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘আজ থেকে তেরো দিন আগে ওই রোগীর ব্রেন স্ট্রোক হয়। সেইসময় তঁাকে রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় মালদা শহরের একটি নার্সিংহোমে রেফার করা হয়। এই নার্সিংহোমের সঙ্গে রেলওয়ে হাসপাতালের চুক্তি রয়েছে। সেদিন থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। পরের দিন ওনার অপারেশন হলেও জ্ঞান ফেরেনি। এরপর আবার অপারেশন করা হয়, কিন্তু তাতেও জ্ঞান ফেরেনি। তৃতীয়বার গলায় ফুটো করে ভেন্টিলেশনের পাইপ দেওয়া হয়।’ মৃতের ভাই বিজয় শূরের দাবি, ‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা প্রথম থেকে জানতে চাইছি, রোগীর কি মৃত্যু হয়েছে? ওনারা বলছেন না, রোগীর মৃত্যু হয়নি, জ্ঞান ফিরবে। আজ সকালে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর অবস্থা ভালো নয়, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আর রোগীর কাপড় নিয়ে আপনারা আসুন। সেইসময়ই আমাদের সন্দেহ হয়। কিছু সময় পর ওনারা রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আদৌ কি আজ রোগীর মৃত্যু হয়েছে, নাকি উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন? টাকা হাতাতেই ওনাকে এতদিন জীবিত বলে রাখা হচ্ছিল। আমরা সমস্ত ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছি। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
মৃতের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, মৃত্যুর সময় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ক্ষতিপূরণ সহ চিকিৎসক ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ দায়ের করা হবে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সমস্ত সত্যতা উঠে আসবে।