বৈষ্ণবনগর: বৈষ্ণবনগরে শুটআউট ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত এবং আক্রান্ত দু’জনেই পুলিশের খাতায় সমাজবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গুলি কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত নিমাই ঘোষ এবং আহত আবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিরঞ্জন দাস, দুজনের বিরুদ্ধেই পুরাতন ফৌজাদারি মামলা রয়েছে।
নিমাইকে ঘটনার পরেপরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাকে জেরার সূত্র ধরে খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের যোগানদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম পান্ডব ঘোষ। আগ্নেয়াস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনার পরেপরেই নিমাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পেশায় দুজনেই দুধ ব্যবসায়ী। ধৃত দু’জনকেই বুধবার আদালতে তোলা হয়। বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি বেশ কয়েক জায়গায় নাকা বসানো হয়েছে।
বীরনগর হাইস্কুলের উলটোদিকে বীরনগর বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশ দিয়ে এগোলে ১০০ মিটারের মধ্যে নিরঞ্জনের বাড়ি ও মদের ঠেক। ঘটনার পরদিন এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতেই টের পাওয়া যায়, পাড়ার ভেতর এই মদের আসর নিয়ে খুব অসন্তোষ তাঁরা। কিন্তু এতদিন কোনও প্রতিবাদ ছিল না কেন সেই প্রশ্নে উত্তর মেলে না। শুধু একে অন্যের মুখ চাওয়াচায়ি হয়। এর মধ্যেই দু’একজন বলেন, ঘোষদের সঙ্গে নিরঞ্জন ও প্রদীপদের জাতিগত শত্রুতা দীর্ঘদিনের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেটা নিয়েই খুনোখুনি হয়ে থাকতে পারে। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা স্বপন সরকারের অভিমত, স্কুলের এত কাছাকাছি বেআইনি মদের ঠেক চলছে, অথচ প্রশাসন আগে জানত না, সেটাও আশ্চর্যের।
এদিকে গুলিকাণ্ডের তদন্তে উঠে এসেছে, মঙ্গলবার বিকাল চারটা নাগাদ নিরঞ্জনের বাড়িতে মদ খেতে গিয়েছিল নিমাই ঘোষ ও তার চার সাগরেদ বাপি ঘোষ, সুজয় ঘোষ, গোপাল ও গৌরাঙ্গ ঘোষ এবং নিহত প্রদীপ কর্মকার। সন্ধ্যায় নিজেদের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়। নিমাই ওখান থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফিরে আসে এবং প্রদীপ ও নিরঞ্জনকে গুলি করে দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। দুজনকে মালদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে প্রদীপকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আক্রান্ত ও অভিযুক্ত সকলেই একই এলাকার বাসিন্দা এবং পূর্ব পরিচিত।
নিমাই জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, বাকিতে মদ খাওয়া নিয়ে তর্কাতর্কির সময় নিরঞ্জন ও প্রদীপ তাকে জাত তুলে গালাগাল দিয়েছিল। নেশার ঘোরে রাগের মাথায় বেরিয়ে গিয়ে পান্ডবের কাছ থেকে ওয়ান শাটার নিয়ে এসে ওই দুজনকে গুলি চালিয়ে দেয়। নিমাই ও পান্ডবকে মঙ্গলবার রাতে চামাগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাপি, সুজয়, গোপাল ও গৌরাঙ্গর খোঁজে তল্লাশি চলছে। আবস্থার অবনতি হওয়ায় নিরঞ্জনকে মালদা মেডিকেল কলেজ থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল দাস বলেন, মদের ওই ঠেকটা বন্ধ করার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকে অনেকবার বলা হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। ওখানে মাঝেমাঝেই গণ্ডগোল হত। শেষ পর্যন্ত যে খুনাখুনি হবে, তা ভাবিনি।