হরষিত সিংহ, মালদা: হিমঘরে মজুত পদ্ম ভরসা। ক্রমশ জেলায় কমছে পদ্মের চাষ। কিন্তু পুজোর মরশুমে প্রায় প্রতি বছর চাহিদা বাড়ছে পদ্ম ফুলের। জোগান দিতে ব্যবসায়ীরা ঝাড়খণ্ড থেকে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে পদ্ম সংগ্রহ করে মালদার (Malda) হিমঘরে মজুত করছেন। পুজোয় জেলায় পদ্মের ঘাটতি মেটাবে হিমঘরে মজুত করে রাখা পদ্মফুল। পুজোর প্রায় এক মাস আগে থেকে প্রতিবেশী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পদ্মফুল সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন জেলার ব্যবসায়ীরা। বিশ্বকর্মাপুজো থেকে কালীপুজো পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত পদ্মের জোগান দিতে এখনও পর্যন্ত কয়েক লক্ষাধিক পদ্মফুল হিমঘরে মজুত করেছেন মালদার বেশ কিছু পদ্মফুল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী রফিকুল শেখ বলেন, ‘হিমঘরে পদ্ম মজুত না রাখলে দুর্গাপুজোয় একশো টাকা পর্যন্ত দাম হয়ে যাবে। কারণ মালদায় পর্যাপ্ত পদ্মের চাষ হয় না। প্রায় এক মাস আগে থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে পদ্মফুল সংগ্রহ করি। সেগুলি হিমঘরে জমা রেখে দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় বিক্রি করি।’
দক্ষিণবঙ্গ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর সহ বিহার, ঝাড়খণ্ড ঘুরে ঘুরে ফুল সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে ফুল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কারণ চলতি মরশুমে মালদা জেলায় একেবারেই পদ্মফুল নেই। জেলার হবিবপুর, বামনগোলা ও গাজোল ব্লকে সামান্য কিছু পদ্ম চাষ হয়। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। ইতিমধ্যে জেলায় মাখনা চাষের প্রবণতা বাড়ছে। তাই পদ্ম চাষে ঝুঁকি অনেকটাই কমছে। জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, ‘জেলায় পদ্ম চাষ খুব একটা হয় না। তবে ক্রমশ পদ্মের চাহিদা বাড়ছে। সঙ্গে পাতার চাহিদাও রয়েছে। দপ্তর থেকে এতদিন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ হয়নি। তবে এবার আমরা এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আগামীতে কৃষকদের উৎসাহিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
বর্তমানে বাজারে বড় পদ্মফুল ১০ টাকা ও ছোট পদ্মফুল ৫ টাকা পিস হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। দুর্গাপুজোর আগে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় গড়ে প্রায় তিন লক্ষ পদ্মের চাহিদা থাকে। এছাড়াও লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ পদ্মের প্রয়োজন হয়। এত পদ্মের জোগান দিতেই এক মাস আগে থেকে সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। ঝুড়ি হিসাবে হিমঘরে রাখা হয়। প্রয়োজন মতো বার করে বিক্রি করা হয়। হিমঘর মালিক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘পুজোর এক মাস আগে থেকে পদ্মফুল হিমঘরে রাখেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ ফুল মজুত থাকে। কালীপুজো পর্যন্ত ফুল রাখেন ব্যবসায়ীরা।
মালদার হিমঘরে মজুত করা পদ্মফুল শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারে নয়। এখানে মজুত রাখা ফুল পুজোয় উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় পাঠানো হয়। এমনকি মালদার হিমঘর থেকে অসমে দুর্গাপুজোয় পদ্ম পাঠানো হয়, এমনটাই দাবি ব্যবসায়ীদের। মোমিন শেখ বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। দাম এখন স্বাভাবিক আছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। চাহিদামতো হিমঘর থেকে বিভিন্ন জেলার বাজারেও পাঠানো হয়।’