হরষিত সিংহ,মালদা: বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে মেয়ে। পরিবার মেনে নিলেও পাড়াপ্রতিবেশীরা মেনে নিতে পাড়েনি। অভিযোগ, তারপরেই স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের নেতৃত্বে শুরু হয় পরিবারের উপর অত্যাচার। গ্রামছাড়া করা হয় ওই পরিবারটিকে। প্রায় দুই বছর ধরে পরিবার নিয়ে বাড়িছাড়া ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের বাগবাড়ির সাকিনের বাসিন্দা উপেন মণ্ডল। বাধ্য হয়ে এখন মালদা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছেন। বাড়ি ফিরতে চেয়ে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন উপেনবাবু। উপেন মণ্ডলের অভিযোগ, ‘মেয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা উপলক্ষ্য মাত্র। এর পেছনে বাড়ি দখলের ষড়যন্ত্র করেছেন স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। গ্রামের বাসিন্দাদের একত্রিত করে তিনিই নাকি বাড়ি ছাড়া করেছেন পরিবারটিকে।’ পরিবারের অভিযোগ, এই বিষয়ে ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরেও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন উপেন মণ্ডল।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্ত সরকার। তাঁর সাফাই, ‘উপেন মণ্ডলের বাড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করেছে। ওদের বাড়ি থেকে তাড়ানোর আমি কেউ নই। সমাজের লোকজন ওদের আসতে দিচ্ছেনা। আমি চাই পুলিশ এর সঠিক তদন্ত করুক।’ ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের বাগবাড়ির সাকিন গ্রামের বাসিন্দা উপেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে গ্রামের পূর্ত দপ্তরের জায়গায় বসবাস করছেন। পেশায় টোটোচালক। বাড়ির পাশেই ক্লাব রয়েছে। অভিযোগ, গত দুই বছর আগে তাঁর ছোট মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেন। তারপর থেকে পরিবারটির উপর অত্যাচার শুরু হয়। অভিযোগ, পাড়াপ্রতিবেশীরা স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্ত সরকারের মদতে মারধর শুরু করেন। তারপর থেকেই বাড়িছাড়া পরিবারটি। থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। উপেনের স্ত্রী শেফালিদেবীর দাবি, ‘আমি বাড়িতে থাকতে চাই। আমরা কোনও দোষ করিনি। বৃদ্ধ স্বামী ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাব? থানাতে কোনও সুবিচার পাইনি তাই জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি।’ জানা যাচ্ছে, একাধিকবার থানায় অভিযোগ হয়েছে। একবার থানায় দুই পক্ষের মধ্যে সালিশি হয়। কিন্তু তারপরেও বাড়ি ঢুকতে পারছেনা পরিবারটি। ওই পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ এই বিষয়ে বিজেপির দক্ষিণ মালদা সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘তৃণমূলের যে যে এলাকায় নেতা আছে, সেখানেই অন্যের বাড়ি দখল করছে। যখনই কেউ অভিযোগ করতে যাচ্ছে, পাড়ার লোকজনদের দিয়ে পালটা অভিযোগ করাচ্ছে যে, পরিবারটি খারাপ। প্রশাসন আছে প্রশাসন দেখবে বিষয়গুলি। তৃণমূল নেতারা আইন নিজেদের হাতে এখন নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ আইন হাতে নিলে কি করবেন এই নেতারা?’ এই বিষয়ে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর মন্তব্য, ‘পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। আইন আইনের পথে চলবে।’