হরষিত সিংহ, মালদা: ‘দাদা রে মনে পড়ে সেই বছর নদীর ওই কোনাতে কত বড় একটা ইলিশ পেয়েছিনু’, হাফপ্যান্ট, শরীরে জড়ানো গামছা। নৌকায় বসে নদীর দিকে তাকিয়ে গল্পের মাঝে এই কথা বলছিলেন বিক্রম চৌধুরী। তাঁর কথার মাঝে শুকু মণ্ডল বলে উঠলেন, ‘তুই ভাব তো, আগের ট্যাংগা গ্যালা কেমন সাইজের ছিল। কই এখন আর ওগলা মাছ দেখাই যায় না।’
মহানন্দায় জল বাড়লেই নৌকা জাল সহ মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েন মৎস্যজীবীরা। প্রতিবছর একই চিত্র দেখা যায় মালদায় (Malda) মহানন্দা (Mahananda) নদীতে। এবারও বর্ষায় নদীর জলস্তর বাড়তেই নদীতে ভিড় মৎস্যজীবীদের। তবে এখন আর আগের মতো মাছ মিলছে না। সারাদিন জাল ফেলেও মিলছে না কোনও মাছ। এখন আর ইলিশ একেবারেই মেলে না। অন্য মাছ পাওয়া গেলেও খুব কম।
জেলে অভিরাম মণ্ডলের কথায়, ‘দুপুর থেকে চারবার নদীতে জাল ফেলেছি আজ। একটিও মাছ পাইনি। আগের মতো আর মাছ মিলছে না। উপায় নাই, মাছ ধরেই সংসার চলে। তবে এখন যা পরিস্থিতি আর মাছ ধরে রোজগার হচ্ছে না।’
রাইখোর, রিঠা, চিংড়ি, বাচা, ট্যাংরা মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল মহানন্দা। এমনকি একসময় এই মহানন্দায় বর্ষা নামলেই প্রচুর ইলিশ মিলত। তখন থেকেই মাছ ধরেই সংসার চলত নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের। ভীম মণ্ডলের কথায়, ‘বাবা মাছ ধরত এই মহানন্দায়। বাবার কাছেই শিখেছি মাছ ধরার কৌশল। অন্য কাজ শিখিনি। এখন নদীতে মাছ মিলছে না। বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে।’
মহানন্দার নিমাইসরা ঘাট। এখানে মহানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে কালিন্দ্রী। দুই নদীর এই মিলনস্থলে একসময় প্রচুর মাছ মিলত। পুরাতন মালদা, ইংরেজবাজারের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক মৎস্যজীবী এখানেই মাছ ধরেন। কিন্তু এখন আর মিলছে না। নদীর তীরে নৌকায় বসে কয়েকজন মৎস্যজীবী। মাছ না মেলায় নদীতে জাল না ফেলেই বসে রয়েছেন। কারণ যাঁরা নদীতে জাল ফেলেছেন, তাঁদের জালে মাছ ওঠে না। এই ফাঁকে কয়েকজন তরুণকে নদীতে নৌকাবিহার করান মৎস্যজীবী গোপাল মণ্ডল। বিনিময়ে তাঁকে ৫০ টাকা দিয়ে যান তাঁরা। সেই টাকায় চা কিনে নৌকায় বসে সকলে মিলে পান করছিলেন। আর মাছ নিয়ে নানা গল্প করছিলেন নিজেদের মধ্যে। বেজার মুখে গোপালকে বলতে শোনা গেল, ‘মাছ ধরতে এসেছি। নদীতে মাছ উঠছে না। তাই নদীতে ঘোরালাম কয়েকজনকে। আজ রোজগার বলতে এটাই।’