কল্লোল মজুমদার ও জসিমুদ্দিন আহম্মদ, মালদা: বাবলা খুনের পর, সাবিত্রী মিত্রের গাড়িতে হামলার অভিযোগ, তারপরে কৃষ্ণেন্দুকে হুমকির ফোন! ক্রমেই মালদা জেলা যেন অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। যার জাল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের হাতে। আর এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে দুটি রুটকে।
শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর হামলার ঘটনাই নয়, এই জেলায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝাড়খণ্ড ও বিহারের দুষ্কৃতীদের নাম লাগাতার উঠে আসছে। মালদায় একের পর এক ঘটনায় ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী দুই রাজ্যের নাম। কারণ একটাই, মালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে এই দুই রাজ্যের সীমানা। যা কার্যত পুরোপুরি উন্মুক্ত। যেখান থেকে মালদায় এসে নানা ধরনের অপরাধ করে ফিরে যাওয়া অত্যন্ত সহজ।
মালদা জেলায় দীর্ঘদিন কাজ করা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীরা মূলত দুটি রুট ব্যবহার করে। এরমধ্যে একটি কালিয়াচকের রাজনগর। কারণ, রাজনগর ঘাটে একেবারেই নেই নজরদারি। এই এলাকা দিয়ে অনায়াসেই চলে যাওয়া যায় সাহেবগঞ্জ। সাহেবগঞ্জের তালঝাড়ি, চর বাবুপুর, ডাকাতটোলা গ্রামটিতেই মূলত আশ্রয় নেয় দুষ্কৃতীরা। শুধু বিহার বা ঝাড়খণ্ডেরই নয়, ওডিশার দুষ্কৃতীরাও জড়ো হয়। এছাড়াও এই এলাকার পাশেই রয়েছে বারহারোয়া, পাকুড়। এই দুটি এলাকাও দুষ্কৃতীদের নিরাপদ আশ্রয়। এই এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় গাজা ও আফিমের চাষ হয়।
ওই পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, তিনি মালদায় থাকার সময় বারবার ওই এলাকাগুলিতে অভিযান চালিয়েছিলেন দুষ্কৃতী ধরতে। কারণ ওই সমস্ত এলাকা দিয়ে মালদায় ঢুকে পড়া অত্যন্ত সহজ। ওই পুলিশকর্তা আরও জানিয়েছেন, রাজনগরের পাশাপাশি মানিকচকের রাজমহল ঘাটও করিডর হিসেবে ব্যবহার করে ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীরা। জলপথে কোনওরকম বাধা না পেয়ে মালদায় ঢুকে পড়া যায়। ওই পথ যে ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের করিডর তা প্রমাণ হয়েছে বাবলা সরকারের খুনের পর। কারণ ধৃতরা খুনের পরেই ওই পথে রাজমহলের দিকে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, মানিকচক থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় বিহারের দুই দুষ্কৃতী। তার মতে রাজমহল, মুঙ্গের ও সাহেবগঞ্জে জলের দরে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়।
শুক্রবার ডি কোম্পানির পরিচয়ে ইংরেজবাজারের চেয়ারম্যানকে হুমকি ফোনের ঘটনা চাউর হতেই জেলাজুড়ে যথেষ্ট চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের সক্রিয়তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিযোগ, বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে মালদা জেলা। আর এটি এমনই একটি জেলা যা মাদক পাচার জগতে এই জেলাকে উত্তর-পুর্ব ভারতের করিডর বলা হয়ে থাকে। আর সেই অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিহার-ঝাড়খণ্ডে। জেলায় একের পর এক ঘটনায় ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ডের নাম। কারণ একটাই, মালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে এই দুই রাজ্যের সীমানা। যা কার্যত পুরোপুরি উন্মুক্ত। যেখান থেকে মালদায় এসে নানা ধরনের অপরাধ করে ফিরে যাওয়া অত্যন্ত সহজ।