কালিম্পং: পাখি পর্যবেক্ষণ, প্রজাপতি পর্যবেক্ষণ শিবির অনেক হয়। নিবিড় প্রকৃতি পাঠের জগতের ট্রেন্ড এখন মথ। মথের অজানা দুনিয়া সম্বন্ধে জানতে জাতীয় মথ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে তিনদিনব্যাপী মথ পর্যবেক্ষণ শিবির শুরু হল কালিম্পং (Kalimpong) পাহাড়ের লুংসেলে (Lungsel)। এই অঞ্চলটি মথের স্বর্গরাজ্য বলেও পরিচিত।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর উদ্যোগে মথ পর্যবেক্ষণ শিবিরের এবারে পঞ্চম বর্ষ। শিবিরের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ৪,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লুংসেল পাহাড়ি জনপদ। ওদলাবাড়ি চৌরাস্তার মোড় থেকে উত্তরে পাথরঝোরার দিকে যে রাস্তাটি এগিয়ে গিয়েছে, সেটি ধরে শিরুবাড়ি পেরিয়ে কালিম্পং জেলার শুরু। যাত্রাপথের প্রায় পুরোটাজুড়ে বাহারি রঙের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি দেখতে দেখতে লুংসেল যাত্রা অত্যন্ত উপভোগ্যও বটে।
এদিন জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শিবিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্ব শেষে বিশেষজ্ঞ যুধাজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘মথ নিজে যেমন অন্ধকারের জীব, তাই সাধারণ মানুষের ধারণাও মথকে নিয়ে অন্ধকারে। মথের বৈচিত্র্য বিশাল বলে জানিয়েছেন তিনি। সাধারণত রাতেই মথ উড়ে বেড়ায়। তবে কয়েকটি প্রজাতির মথ আবার দিনেও ওড়ে।’ তিনি জানিয়েছেন, পৃথিবীজুড়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার প্রজাতির মথ এখনও অবধি নথিভুক্ত করা হয়েছে। যারমধ্যে ভারতে রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার প্রজাতি। যার মধ্যে অ্যাটলাস, টাইগার, আউল, ফ্রুট পিয়ার্সিং ইত্যাদি প্রজাতির মথ উল্লেখযোগ্য বলে তাঁর মত।
ন্যাফের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসুর কথায়, ‘কোনও একটি জায়গার পরিবেশ কতটা ভালো তা বুঝিয়ে দিতে মথের ভূমিকা অপরিসীম। একেক ধরনের মথ একেক ধরনের গাছের পাতা খেয়ে বড় হয়। আর এ কারণেই কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যত বেশি প্রজাতির মথ দেখতে পাওয়া যাবে বুঝতে হবে যে ওই এলাকায় গাছপালারও বৈচিত্র্য রয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন পাখি, সরীসৃপ, বাদুড়ের প্রিয় খাদ্য মথ। যার অর্থ মথের সংখ্যা কমে গেলে এই প্রাণীগুলোও বিপদে পড়বে।
কলকাতা (Kolkata) থেকে এবার শিবিরে এসেছেন আরেক মথ বিশেষজ্ঞ ডঃ পূরব চৌধুরী। মথের মতো পতঙ্গ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে যে গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন তিনি।
আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত জারি থাকবে শিবির। দু’দিন ধরে রাত জেগে মথ পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মথের ছবি তুলে রাখা, পরদিন শিবিরে অংশগ্রহণকারী এবং স্থানীয় স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে বিশেষ ক্লাসে সেগুলোর বিবরণ তুলে ধরা হবে বলে ন্যাফের তরফে জানানো হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩০ জন এই শিবিরে যোগ দিয়েছেন।