সপ্তর্ষি সরকার, ক্রান্তি: সম্প্রতি জেলার দুই জায়গায় কোতোয়ালি এবং ধূপগুড়ি থানা (Dhupguri Police Station) এলাকার দুটি আলাদা ঘটনায় তোলা তুলতে গিয়ে বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক পুলিশকর্মী৷ জেলায় রয়েছেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও রাজপথে পুলিশের তোলাবাজিতে ছেদ পড়েনি বলেই অভিযোগ উঠেছে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল এক ভিডিওকে কেন্দ্র করে।
রবিবার রাত থেকে ভাইরাল ওই ভিডিওটি (যদিও এর সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ) জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) ক্রান্তি ফাঁড়ি সংলগ্ন ক্যানাল রোডের। ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে রোডে চলা ভারী ডাম্পার দাঁড় করিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্যামোফ্লাজ প্যান্ট, সাদা টি-শার্ট এবং মাথায় টুপি পরা এক ব্যক্তি। টর্চের আলোয় ইশারা করে ডাম্পার দাঁড় করাচ্ছেন সেই ব্যক্তি৷ এরপর ডাম্পারচালক জানলা দিয়ে হাত বের করেছেন এবং নীচে দাঁড়ানো ওই ব্যক্তি হাত তুলে তার থেকে কিছু নিচ্ছেন৷ একে একে এভাবেই পাড় হচ্ছে একের পর এক ডাম্পার। সেই ডাম্পারে কী রয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও অভিযোগ রাতের অন্ধকারে বালি পাচারের সময় ওভারলোডেড ডাম্পার থেকে তোলা আদায় করছিলেন ক্যামোফ্লাজ প্যান্ট পরা পুলিশকর্মী। স্থানীয় মানুষের দাবি অনুযায়ী, ডাম্পারচালকদের থেকে হাত বাড়িয়ে কিছু নেওয়া ওই ব্যক্তি ক্রান্তি ফাঁড়িতে কর্মরত এক হোমগার্ড। পথচলতি কোনও মানুষের মোবাইলবন্দি রাতের বেলার ওই ভিডিওতে ‘পিসি পার্টি’র কথাও শোনা যায়। এই ঘটনায় পুলিশ ও শাসকদলের যোগ থাকার অভিযোগ তুলে ক্রান্তির বাসিন্দা তথা বিজেপির মহিলা মোর্চার জেলা সভানেত্রী দীপা বণিক বলেন, ‘ওই পথে তোলাবাজি থেকে আদায় হওয়া বিপুল পরিমাণ টাকা পুলিশ এবং তৃণমূলের নেতাদের পকেটে ঢুকছে। এর সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে ক্রান্তির ট্রাফিক গার্ডের ওসির। এভাবে টাকা তুলে নেতাদের জোগান দেওয়ায় বছরের পর বছর ট্রাফিক ওসির বদলি হয় না। এটাকে বলা যায় পুলিশ ও তৃণমূলের তোলাবাজির জয়েন্ট ভেঞ্চার।’
ক্যানাল রোড হয়ে গজলডোবাগামী পথ বন্ধ থাকলেও ওদলাবাড়ি থেকে আসা ডাম্পারগুলো ক্রান্তি ফাঁড়ি হয়ে ওই পথেই যাতায়াত করে। তবে ভাইরাল ভিডিওটি কবে রেকর্ড করা তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য মেলেনি। অতি সম্প্রতি ক্রান্তি ফাঁড়ির ওসির দায়িত্ব নেওয়া কুশাং টি লেপচা বলেন, ‘একেবারেই ক’দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। আমার সময়কালে এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই৷’
জেলা পুলিশ সুপারও ভিডিওটি কবে কোথায় রেকর্ড করা সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়ায় এনিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন পুলিশ সুপার।
ক্রান্তি ফাঁড়ি এলাকার লাটাগুড়িতে বাড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপের। সেই এলাকাতেই এভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রকাশ্যে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহে এনিয়ে পরপর তিনবার এমন অভিযোগ ওঠাকেও ভালো চোখে দেখছেন না কেউই। তবে এনিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতির মন্তব্য মেলেনি। প্রকাশ্যে কিছু না জানানো হলেও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল ভিডিও নিয়ে জেলা পুলিশের অন্দরে জোর খোঁজখবর শুরু হয়েছে।