উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতের মাঝেই ইরানের উপর হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। আর এর পরেই এর প্রেক্ষিতে রাতে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছে ইরানের সংসদ। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সে দেশের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিল। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে তেলের দরে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ভারতের বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে জুনে রাশিয়া এবং আমেরিকা থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে দিল্লি। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ভারত। জরুরি পরিস্থিতিতে অন্তত ৯-১০ দিন চালানোর মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি ভারতের কাছে মজুত রয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি।
ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ এত সহজে বন্ধ হওয়ার নয়। আর মাঝেই ইরানে আমেরিকা বিমান হামলা চালানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এই সংঘাত চলতে পারে দীর্ঘমেয়াদী। এই পরিস্থিতির আগাম অনুমান করেই বিকল্প হিসেবে রাশিয়া এবং ইউএসএ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে মজুত রাখার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, জুন মাসে ভারতীয় শোধনাগারগুলি প্রতিদিন গড়ে ২০ লক্ষ থেকে ২২ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে, যা গত দু’বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। এছাড়াও ভারতে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও কুয়েত থেকেও। তবে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। যদিও ভারত হরমুজ প্রণালী এড়িয়ে সুয়েজ খাল হয়ে রাশিয়ার উরালস, ইএসপিও এবং সোকোল তেল আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত বা প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে আমদানি করে দেশে।
বরাবরই পশ্চিম এশিয়ার দেশ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে ভারত। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারী এবং ব্যবহারকারী দেশ ভারত। বিদেশ থেকে প্রায় দৈনিক ৫১ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। জানা গিয়েছে, মে মাসে ভারত ইউএসএ থেকে অপরিশোধিত তেল দৈনিক আমদানি করেছে ২.৮ লক্ষ ব্যারেল। সেখানে জুন মাসে অপরিশোধিত তেলের দৈনিক আমদানি বেড়ে ৪.৩৯ লক্ষ ব্যারেল হয়েছে। মে মাসে রাশিয়া থেকে দৈনিক ১৯.৬ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি করেছিল ভারত। জুন মাসে সেটা বেড়ে দৈনিক ২০ লক্ষ ব্যারেল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেপলারের তথ্য বলছে, ইজরায়েল-ইরান সংঘাত সরাসরি ভারতে তেল সরবরাহের উপরে কোনও সরাসরি প্রভাব পড়বে না।
বিশ্ববাণিজ্য বিশ্লেষক সংস্থা কেপলার তাদের বিশ্লেষণে জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বিশ্বের জ্বালানি বাজারের উপরে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ, এই সরু জলপথ দিয়েই সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল এবং কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি হয়। ভারতের তেলের ৪০ শতাংশ এবং গ্যাসের অর্ধেক এই প্রণালীর উপরেই নির্ভরশীল। এই প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে চিনের মতো যে সব দেশ মূলত ইরানের তেলের উপরে নির্ভরশীল, তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরান নিজেও প্রায় ৯৬ শতাংশ তেল রপ্তানি করে খার্গ দ্বীপ দিয়ে, যেটি হরমুজ প্রণালীর সঙ্গে যুক্ত। নিজস্ব রপ্তানির পথ বন্ধ করলে চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়তে হবে ইরানকেও।