অমিতকুমার রায়, হলদিবাড়ি: মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশ অধিকারী ও তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে নিয়ে একসময় কম জলঘোলা হয়নি। বিধায়ক-কন্যার চাকরির মধ্য দিয়েই এসএসসি’র পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি সামনে আসে। ওই দুর্নীতির জেরে অঙ্কিতা চাকরি হারান। পরে পরেশ মন্ত্রিত্বও হারান। যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে অঙ্কিতা শনিবার হলদিবাড়িতে মিছিল করেন। অঙ্কিতা এদিন মিছিলে গলা ফাটানোয় বিরোধীরা তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অঙ্কিতাকে নিয়ে নানা ধরনের মিম ঘোরাঘুরি করছে।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য দেবাশিস চক্রবর্তী বললেন, ‘টাকাপয়সা ও প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিকভাবে চাকরি নেওয়ার প্রথম নিদর্শন হলেন অঙ্কিতা অধিকারী। যোগ্যদের চাকরি ফেরানোর দাবিতে আজ তিনি মিছিল করছেন। এর থেকে হাস্যকর আর কী হতে পারে!’ অঙ্কিতার মিছিলে হাঁটা নিয়ে শাসকদলের কেউই মুখ খুলতে নারাজ। তৃণমূলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মনের বক্তব্য, ‘চাকরিহারাদের জন্য জেলার যুব সংগঠন পথে নেমে আন্দোলন শুরু করেছে। অঙ্কিতার বিষয়ে কিছু বলব না।’ অঙ্কিতা নিজেও এবিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
এদিন শহরে প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়। তৃণমূলের ব্লক কমিটির সভাপতি গোপাল রায়, শহর সভাপতি পূরবী চক্রবর্তী, যুবর জেলা সভাপতি কমলেশ অধিকারী সহ অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর ওই কার্যালয় থেকে একটি ধিক্কার মিছিল শুরু হয়। তৃণমূল যুব ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ওই মিছিলটি শহরে বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সংগঠনের জেলা সভাপতি কমলেশ অধিকারী মিছিলের সর্বাগ্রে ছিলেন। তাঁর পাশেই ব্যানার ধরে মিছিলে অঙ্কিতা শামিল হন। শিক্ষকদের চাকরি যাওয়ার পিছনে বিজেপি ও সিপিএমের যৌথ ষড়যন্ত্রকে দায়ী করা হচ্ছিল। অন্যদের সঙ্গে অঙ্কিতাও সমানতালে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এরপরই তাঁকে ট্রোল করা শুরু হয়।
ফরওয়ার্ড ব্লকের লোকাল কমিটির সম্পাদক কমলকুমার রায় বলেন, ‘যাঁকে চাকরি দিতে রাজ্যের অন্য শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয় তিনি আবার শিক্ষকদের হয়ে মিছিল করবেন। এটা খুবই লজ্জাজনক। এভাবে চাকরিগুলি দিতে গিয়েই আজ হাজার হাজার শিক্ষকের জীবন বিপন্ন হয়েছে। এমন মিছিল লোক হাসানো ছাড়া আর কিছুই নয়।’ এসইউসিআই-এর শিক্ষক নেতা আবদুল জলিল সরকার মিছিলে হাঁটা নিয়ে অঙ্কিতাকে কটাক্ষ করছেন। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূলের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে আজকে যোগ্যরাও চাকরিহারা। এই ধরনের মিছিলে হাঁটায় তৃণমূলের কারও অধিকার নেই। এটা হাস্যকর ও লজ্জাজনক। তৃণমূল চাইলে এই সমস্যার সমাধান আগেই করতে পারত। এখন এসব করার কোনও মানেই হয় না।’