শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি : বর্ষার মরশুম চলছে। জুন থেকে তিন মাস পর্যটকদের জন্য জঙ্গল রাখা হয়েছে। বন্ধ জঙ্গলেই জোরকদমে চলছে গাছ এবং ঘাস লাগানোর পালা। গরুমারায় গন্ডারের প্রিয় খাবার ঢাড্ডা, মালসা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস যেমন লাগানো হচ্ছে, তেমনি জলপাইগুড়ি বন বিভাগের বিভিন্ন বনাঞ্চলে লাগানো হচ্ছে শাল, সেগুন গাছ। অন্যান্য বন্যপ্রাণীর রুচির দিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। হাতিদের প্রিয় চালতা কিংবা বাঁদরের কথা মাথায় রেখে লটকা, জাম ইত্যাদি গাছে লাগাচ্ছে বন দপ্তর। এতে একদিকে বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের অভাব মিটবে, অন্যদিকে জঙ্গলেরও ঘনত্ব বাড়বে বলে জানালেন জলপাইগুড়ি বন বিভাগের এডিএফও জয়ন্ত মণ্ডল। তিনি জানান শুধু বন্যপ্রাণীদের খাবারের জোগান বাড়ানো নয়, জঙ্গলের গাছের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। লাগানো হচ্ছে শাল, সেগুন সহ বিভিন্ন গাছ।
প্রতিবছর বর্ষার মরশুমে বিভিন্ন বনাঞ্চলে গাছ লাগানোর তোড়জোড় চলে বন দপ্তরের তরফে। শুধু গাছ নয়, গরুমারা বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে গন্ডারদের খাবারের সংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসও লাগানো হয় জঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। তবে গতবছর গরুমারায় নতুন করে ঘাস লাগানো হয়নি। এবছর আবার আগুন লেগে গরুমারা জঙ্গলের মেদলা নজরমিনার সংলগ্ন বিস্তীর্ণ তৃণভূমি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যার জেরে গরুমারায় বসবাসকারী ৬০টির বেশি গন্ডার ছাড়াও বাইসন, হরিণ, ছোট-বড় অন্য তৃণভোজীদের খাদ্যভাণ্ডারে টান পড়েছিল।
এছাড়া বারবার লোকালয়ে হাতি, বাঁদর বেরিয়ে আসা, কৃষিজমি থেকে স্থানীয়দের ঘরে হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জঙ্গলে তাদের খাদ্যাভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। সমস্যা সমাধানে গরুমারার মাঝ দিয়ে জলঢাকা, মূর্তি নদী ধরে গরুমারা জঙ্গলের প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসের চারা লাগানো হচ্ছে। জলপাইগুড়ি বন বিভাগের চালসা, লাটাগুড়ি, ডায়না ইত্যাদি রেঞ্জেও প্রায় সত্তর হেক্টর জমিতে ফল যেমন, লটকা, জামরুল, জাম, বনকাঁঠাল ইত্যাদি গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের এডিএফও রাজীব দে বললেন, ‘বনে জোরকদমে ঘাস লাগানো হচ্ছে। এই ঘাস লাগানো হলে বন্যপ্রাণীদের খাবারের ভাণ্ডার আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।’ এতে কিছুটা হলেও লোকালয়ে বুনোদের দাপট কমবে বলে আশা বনকর্তাদের।
ময়নাগুড়ি রোড পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক নন্দু রায় বন দপ্তরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘জঙ্গলে আরও বেশি পরিমাণে ফলের গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা অনেকদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছিলাম।’