অরুণ ঝা, ইসলামপুর: কোটি কোটি টাকার আগ্নেয়াস্ত্র (Firearms) মজুত রয়েছে চিকেন নেক (Rooster’s Neck)-এ। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর ব্লক ও গ্রাম সংসদগুলিকে কেন্দ্র করে অস্ত্র কারবারের সাপ্লাই চেন ভাঙা পুলিশ প্রশাসনের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ। সেইসঙ্গে অস্ত্রের কারবারে বাংলাদেশি দুষ্কৃতী-যোগ পুলিশের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ।
গত জানুয়ারি মাসে পুলিশের উপর শুটআউটের ব্লু-প্রিন্টের মাস্টারমাইন্ড ছিল এক বাংলাদেশি দুষ্কৃতী। সেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতী, বিহারের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশে ফান্ডের ব্যবস্থা করে আদালত চত্বরে মূল দুষ্কৃতীকে আগ্নেয়াস্ত্র হস্তান্তর করেছিল। কয়েক বছর আগে একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত ইসলামপুর থানার গুঞ্জরিয়ার এক দুষ্কৃতীও ছিল বাংলাদেশের বাসিন্দা। নাম পরিচয় গোপন করে সে ভারতে বসবাস করছিল। ওই দুষ্কৃতীর ‘দুবাই কানেকশন’ পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছিল। কেবল স্থানীয়ভাবে নয়, অস্ত্র কারবারের অন্যতম করিডর ইসলামপুরকে কেন্দ্র করে চলা চক্রটির সঙ্গে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যোগ জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় থ্রেট।
কিন্তু কেন বাংলাদেশ (Bangladesh)? কারবারের এক কিংপিনের কথায়, ‘বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের দিয়ে ক্যারিয়ার ও কিলিংয়ের কাজ করাতে ঝুঁকি কম। ফলে অস্ত্রের কারবারে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের ডিমান্ড আগেও ছিল, এখনও আছে।’
বছর কয়েক আগে রাজা রামমোহন চিলড্রেন্স অ্যাকাডেমির সামনে এক দুষ্কৃতী ফিল্মি কায়দায় এক তরুণীকে লক্ষ করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। ওই তরুণী বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই ওই দুষ্কৃতী পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করে। শেষপর্যন্ত অবশ্য ধরাও পড়ে। তবে দিনদুপুরে শহরে দুষ্কৃতীর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ার ঘটনা শহরবাসী আজও ভোলেননি। পরে তদন্তে জানা যায়, শহরের এক বিত্তশালী তরুণ ওই তরুণীকে খুন করতে সুপারি কিলার এনেছিল। একই কায়দায় ডালখোলায় এক ভুট্টা ব্যবসায়ীকে সুপারি কিলার এনে খুন করার নজির তো বছর তিনেক আগেই রয়েছে।
শাসকদলের অন্তঃকলহে ইসলামপুর, চোপড়া ও গোয়ালপোখরে গোলাগুলির অজস্র নজির ইসলামপুর পুলিশ জেলায় রয়েছে। ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগারওয়ালের ওপরও হামলার ছক কষা হয়েছিল বছর কয়েক আগে। যদিও একাধিক অভিযুক্তকে সময় থাকতে গ্রেপ্তার করে ফেলে পুলিশ। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘এমন কয়েকটি এলাকা আছে যেখানে পুলিশ একটু অসতর্ক হলেই বগটুই কাণ্ড ঘটতে বিলম্ব হবে না।’
চিকেন নেক ইসলামপুর পুলিশ (Islampur Police) জেলার বিভিন্ন এলাকা যে অবৈধ অস্ত্রের ভাণ্ডার তা ওপেন সিক্রেট। ইসলামপুরের পাঁচ দশকের বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী এলাকার স্বার্থে এই মর্মে দফায় দফায় সরব হয়েছেন। পুলিশের তরফ থেকেও আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারে লাগাম কষতে চেষ্টার অন্ত নেই। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দোর্দণ্ডপ্রতাপ দাদাদের অস্ত্রের ভাণ্ডার স্পর্শ করা কতটা সম্ভব হবে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।