বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: এবার শারদ উৎসবে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের নতুন ঠিকানা হতে চলেছে ভারত-চিন সীমান্তের ঐতিহাসিক ‘রণক্ষেত্র’ চো-লা ও ডোকলাম। দুর্গাপুজো শুরুর ঠিক একদিন আগে ২৭ সেপ্টেম্বর কেবল ভারতীয় পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ওই দুই রণক্ষেত্র। সোমবার সিকিম সরকারের পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের তরফে এই কথা জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি, বিধিনিষেধও আছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন পর্যটকদের ২৫টি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। কয়েক দিনের মধ্যে পারমিট দেওয়া শুরু হবে। সিকিম সরকারের ওই ঘোষণায় খুশির হাওয়া পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ী মহলে।
সিকিম সরকারের পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সি সুভাকর রাও জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে চো-লা ও ডোকলামে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে। এটি চালু করার আগে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই দুটি এলাকা কেবল ভারতীয় পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য খোলা থাকবে। ছাঙ্গুর বাইরে বিদেশিদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। চোলা ও ডোকলাম পূর্ব সিকিমের অধীন। গ্যাংটক থেকে ডোকলামের দূরত্ব প্রায় ৬৮ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১৩ হাজার ৮৮০ ফুট। ২০১৭ সালে ডোকলামে ভুটানের অংশে চিনা সেনারা রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করলে ভারত রুখে দেয়। দু’মাস ধরে চলে সামরিক উত্তেজনা। অবশেষে চিন নির্মাণকাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। সেই ঘটনার আটবছর পর পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলছে ডোকলামে।
অন্যদিকে চো-লা হিমালয়ের চোল পর্বতমালার একটি গিরিপথ। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যকে চিনের তিব্বতের সঙ্গে জুড়েছে। এটি নাথু-লা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ১৩ হাজার ফুট। চো-লা পাসটি সিকিম রাজপরিবার নিয়মিত ব্যবহার করত। তাদের চুম্বিতে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ ছিল। চো-লা ও তুমলং হয়ে চুম্বিতে যাতায়াত করতে হত। এই গিরিপথটি সিকিম এবং তিব্বতের মধ্যে প্রধান বাণিজ্যপথ ছিল। নাথু-লা এবং চো-লায় ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় চিনা সেনাবাহিনীর। তুষারপাতের জন্য নাথু-লা ইতিমধ্যে সিকিমের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এ বার চো-লা ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা।
উচ্চতা, তুষারপাত, হিমশীতল আবহাওয়া অক্সিজেনের ঘাটতির কথা মাথায় রেখে সিকিম সরকার ওই দুটি এলাকা ভ্রমণের জন্য কিছু নিয়ম ঠিক করেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ২৫টি যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। পর্যটকদের ১৭ মাইল, কুপুপ ও গ্নাথং-এ আবহাওয়া মানিয়ে নিতে থাকতে হবে। সেখানে পরিকাঠামো উন্নত করা হয়েছে। ডোকলামে ইতিমধ্যে পরিকাঠামো তৈরি হলেও চো-লায় ৫ কিলোমিটার এলাকা পাঙ্গোলাখা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্যে রয়েছে। এখানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কাজ শেষের পথে। এখানে বাইকে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সেটা শর্তসাপেক্ষে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন