সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: ডায়মন্ড হারবার জিতবে কিনা’-র থেকেও ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি মাঠে আসছেন,’ স্টেডিয়ামের ইতিউতি এই প্রশ্নটাই সম্ভবত বেশি ঘুরে বেরাল ডুরান্ড ফাইনালের একদিন আগে।
সম্ভবত কিবু ভিকুনাই ঠিক। ৩২ ক্লাবের লড়াইয়ের পর দ্বিতীয় সারির লিগে সদ্য ওঠা তারাই কিন্তু শেষ দুইয়ে। প্রতিপক্ষও ফেলনা নয়। বরং নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি নামছে নিজেদের ট্রফি ধরে রাখার লক্ষ্যে। তবু উন্মাদনা কোথায়? লজ্জার এবং দুঃখের ব্যাপার হল, যে শহরের পরিচয় ভারতীয় ফুটবলের মক্কা হিসাবে, সেই শহরেরই একটা ক্লাবকে প্রায় হাজার ১৫ টিকিট কিনে মাঠ ভরানোর উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। হয়তো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হাজার কুড়ি দর্শক এনে হাজির করবেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ কিন্তু তাতে ফুটবল বাঁচবে কি? সেটা জানেন বলেই হয়তো নর্থইস্ট কোচ পেদ্রো বেনালি এদিন একান্তে বলে গেলেন, ‘গুয়াহাটিতে আইএসএল ডার্বিতে পুরো গ্যালারি খালি ছিল, মনে পড়ে? এর নাম ফুটবল ভালোবাসা?’ আর সাংবাদিক সম্মেলনে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হল, এরকম মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট-ইস্টবেঙ্গলের বিদায়ে এরকম সমর্থকহীন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলাটা সহজ হয়ে গেল কিনা? বেনালি প্রবল আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, ‘না, আমি বলব উলটো। কার সমর্থক বেশি সেটা বড় কথা নয়। মাঠ ভরা থাকলে ফুটবলারদের খেলতে ভালো লাগে। গতবার মোহনবাগানের সমর্থকরা মাঠ ভরিয়েছিলেন বলেই আমার ছেলেরাও উত্সাহিত হয়।’
দর্শক হিসাবে ডায়মন্ড হারবার থেকে কিছু মানুষ, মন্ত্রী-সান্ত্রী, প্রতিরক্ষা দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ, সামরিক বাহিনীর লোকজন ও তাঁদের পরিবার হয়তো থাকবেন কিন্তু প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীরা কেন এই রাজ্যেরই একটা দলকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসবেন না, প্রশ্নটা থেকেই গেল। তবে আপাতত কিবু নিজে নিশ্চিতভাবেই এসব নিয়ে ভাবতে চাইবেন না। তিনিও জানেন, যতই একাধিক আইএসএলের দলকে হারান, যতই ফাইনাল খেলুক, তাঁর দল আন্ডারডগই। হয়তো সেটাও একদিকে আশীর্বাদই। দলকে তাতাতে সুবিধা হচ্ছে। প্রত্যাশা না থাকলেও ফাইনালে উঠে পড়ায় চাপ তো নিশ্চিতভাবে তৈরি হয়েছে কিছুটা। সেখানে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কোচ বেনালি ও অধিনায়ক মিচেল জাবাকোকে দেখে মনে হল অনেকটাই হালকা মেজাজে আছেন তাঁরা। দলে ছয় বিদেশিকেই পাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে দলের বাকিরাও ফর্মে। চোট-আঘাত নিয়ে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করতেই মুচকি হাসি স্প্যানিশ কোচের মুখে, ‘কারও চোট নেই। পরের উড়ানে সবাই আসছে। আর আলাদিনের (আজারেই) কথা জানতে চাইছেন তো? সেও আসছে সঙ্গে।’ তুলনায় শক্তির বিচারেও অনেক পিছিয়ে ডায়মন্ড হারবার। আলাদিনের জন্য নিশ্চিতভাবেই আলাদা পরিকল্পনা থাকবে কিবুর। তবে নিজেই জানালেন, ‘ওরা গোটা দলটাই শক্তিশালী। তাই আলাদিনকে পাহারায় রাখতে তো হবে, সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে বাকিদের কথাও।’ এদিনের অনুশীলনে দেখা গেল সদ্য দলে যোগ দেওয়া ব্রেস মিরান্ডাকেও। সেমিফাইনালে চোট পাওয়া হোলিচরণ নার্জারিকে ম্যাচের দিন দেখে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেবেন।
২০২৯ সালে মোহনবাগানের কোচ হিসাবে ডুরান্ড কাপ জিততে পারেননি। সেবার হারতে হয় গোকুলাম কেরালা এফসি-র কাছে। এবার প্রত্যাশার চাপের ছিটেফোঁটাও নেই। তাই চ্যাম্পিয়ন হলে নিশ্চিতভাবে লেখা হবে এই শহরের ফুটবল ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। নাহলেও দোষারোপ অন্তত করবেন না কেউই।