দিনহাটা: হঠাৎ করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকরা ব্যাংকে গেলে তখন জানতে পারছেন তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি লেনদেন হয়েছে। সেজন্য সাইবার ক্রাইম থানায় হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। কারও অ্যাকাউন্ট হিমাচলপ্রদেশ, কারও আবার হরিয়ানা সাইবার ক্রাইম থানার তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, তাঁরা এরকম কোনও লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নয়। এরফলে দিনহাটায় আতঙ্ক বাড়ছে। দিনহাটা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ধীমান মিত্র বলেন, ‘ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে বেআইনি টাকা লেনদেন হয়েছে। সাইবার ক্রাইমে হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সেগুলি ফ্রিজ হয়ে থাকতে পারে। তবে আমাদের এবিষয়ে এখনও কেউ অভিযোগ জানায়নি।’
দিনহাটা শহরের ব্যবসায়ী সৌম্যদীপ সাহার একটি কাপড়ের দোকান আছে। দু’দিন আগে তিনি লক্ষ করেন তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ হয়েছে। এরপর তিনি কোচবিহার সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ জানাতে যান। সেখান থেকে তাঁকে জানানো হয় তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে হিমাচলপ্রদেশের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ হয়েছে। তাই তাঁকে সেখানে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। একথা শুনে ওই ব্যবসায়ী চরম বিপাকে পড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘অ্যাকাউন্টটি আমার ব্যবসার কাজে প্রতিনিয়ত ব্যবহার হয়। কিন্তু ফ্রিজ হয়ে যাওয়ায় লেনদেন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে সবজি বাজার, গালামালের দোকান কিংবা পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হামেশাই অনলাইন পেমেন্ট করছে। এককথায় অনলাইন লেনদেন দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গত এক মাসে দিনহাটায় একাধিক ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ায় অনলাইনে টাকা লেনদেনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরকম একজন ভুক্তভোগী বামনহাটের অমিত দাস। তাঁর অভিযোগ, কোনও গ্রাহক যে টাকা দিচ্ছেন, সেটি সাইবার জালিয়াতির টাকা কি না, তা যাচাইয়ের কোনও উপায় তাঁদের কাছে নেই। কিন্তু একবার টাকা নেওয়ার পর যদি সেই টাকা আটকে যায় অথবা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এতটা জটিল আকার নিয়েছে যে বামনহাটের একাধিক ব্যবসায়ী আতঙ্কে অনলাইন পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
কোচবিহারের সাইবার বিশেষজ্ঞ ঋত্বিক রায়ের বক্তব্য, ‘মূলত দুটি কারণে এমন হতে পারে। প্রথমত ফ্রিজ অ্যাকাউন্টটিতে কোনওভাবে বেআইনি অর্থ লেনদেন হয়েছে। সেই সূত্র ধরে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ এবং অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়া। দ্বিতীয়ত, কেউ ওই ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছিল। এবার সে সাইবার ক্রাইমে ওই অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে তার কাছে জোর করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। তবে দ্বিতীয় কারণটির সম্ভাবনা এক্ষেত্রে কম। প্রত্যেককে এবিষয়ে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করা উচিত।’
যদিও এদিন কোচবিহার সাইবার ক্রাইমে ফোন করে কোনও সাড়া মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উভয়ই সরকারের কাছে দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।