সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: নাম ছিল তার বালিয়া নদী। বর্ষার জলে দুকূল ভরে গেলে ডিঙি নৌকা ভাসাতেন পাড়ের মানুষ। টোনা, বিলকান্দি (লম্বা ও চ্যাপ্টা), নিদুষি (তেলাপোয়া গোত্রের), বালিগাধা (বেলে), বোয়াল, গুচি, পয়াঁ, মাছের ছড়াছড়ি। এখন বালিয়ার সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে থাবা বসিয়েছে রুগ্নতা। নাম হয়েছে ‘খাঁড়ি’। প্রতি বছর বর্ষায় বালিয়া নদীর জল কমতেই হয়ে ওঠে খাঁড়ি। তারপর উচ্চ ফলনশীল নীচু জমির বুকে চলে চাষাবাদ। এখন বোরো ধানের বীজতলা তৈরি হচ্ছে।
লোকমুখে বালিয়া নদীর জন্ম নিয়েও রয়েছে গল্প। কালিয়াগঞ্জ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের (Dakshin Dinajpur) কুশমণ্ডি (Kushmandi) ব্লকের শেষ প্রান্তে যে বড়বিল থেকে বালিয়া নদীর জন্ম সেই বিল আসলে লোককাহিনী সত্যপিরের মালঞ্চা নগরী। কোনও একসময় ভূমিকম্পের ফলে মালঞ্চা নগরীর পতন হলে জন্ম হয় বড়বিলের। বড়বিল জন্ম দেয় বালিয়া নদীর।
নদী গবেষক সুকুমার সরকারের মতে, ‘বালিয়া শ্রীমতীর শাখা নদী। কালিয়াগঞ্জ ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রামের কাছে শ্রীমতী নদী থেকে অন্যদিকে আটঘেরার কাছে বড়বিল থেকে ছোট ছোট দুটি জলস্রোত মিলে উৎপত্তি হয়েছে বালিয়া নদীর।’ অনন্তপুর গ্রামের বীরেন বসাক, বালাপুর গ্রামের সহদেব রায়, ধনো রায়দের বালিয়া নদীর জন্ম প্রসঙ্গে অভিমত এক। তেমনি একদিন বালিয়া নদীর অস্তিত্ব থাকবে না বলে একই অভিমত, জেলার নদী গবেষক থেকে গ্রামবাসীদের। বড়বিল থেকে শুরু হয়ে বালাপুর, কাশিডাঙ্গা, ঘাটসা, নওগাঁ, দলদলিয়া, সরলা, তিলডাঙি, ভাদুরিয়া হয়ে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বংশীহারী ব্লকের বিলবড়াইল মৌজার বরণবিলে হারিয়েছে গতি। নদী থেকে খাঁড়ি হয়ে নালায় পরিণত হতে হল কেন বালিয়াকে? একাধিক অভিযোগ। খনন হয়নি কোনওদিন। আবর্জনা, মিলের ছাই, পলি জমে ভরাট হয়েছে নদীর বুক।
নদী গবেষক সুকুমার সরকার বলেন, ‘বালিয়াকে ভুলে যেতে চায় প্রশাসন।’ তুহিনশুভ্র মণ্ডলের অভিযোগ, ‘বালিয়ার পাড়ের মানুষদের নদীর চিত্র বদলের ছবি দেখতেই হবে।’ বিজ্ঞানকর্মী রণজিৎ নিয়োগীর কথায়, ‘বালিয়া নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হলে কুশমণ্ডি ও বংশীহারী ব্লকের হাজার হাজার মানুষের জীবনে প্রভাব পড়তে বাধ্য।
একশো দিনের প্রকল্প এখন স্বপ্নসমান। তাহলে খনন হবে কী করে। এমন প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে প্রশাসনের কর্তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। যেমন করে হয়তো বালিয়া নদী তাকিয়ে থাকে প্রকৃতির দিকে।