কোচবিহার: খেলাধুলোর পরিকাঠামো ও সরকারি উদাসীনতার কারণেই জেলায় খেলাধুলোর মান কমছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোচের অভাব থাকায় ক্রিকেট, ফুটবল সহ অন্যান্য খেলাধুলোর নিয়মিত প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। মহকুমাগুলিতে প্রশিক্ষণের পরিকাঠামোর অভাব থাকায় সেখানকার খুদে খেলোয়ারদের জেলা স্তরে (কোচবিহার স্টেডিয়াম) গিয়ে প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নেওয়া কার্যত অসম্ভব। ফলে শুরুতেই প্রতিভা হারিয়ে যাচ্ছে। নিউ কোচবিহারে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের উদ্যোগে একটি স্পোর্টস হাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিভা তুলে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজও থমকে রয়েছে।
ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালো খেলোয়ার হওয়ার জন্য প্রথম প্রয়োজন একেবারে ছোট বয়সেই প্রতিভা তুলে আনার। কিন্তু কোচবিহার জেলায় খেলাধুলোর প্রশিক্ষণে সবচেয়ে বড় সমস্যা দাঁড়িয়েছে সেখানেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে জেলা স্তরে কোচবিহার স্টেডিয়ামে বিভিন্ন খেলাধুলোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু জেলাতে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা থাকলেও সেখানে উন্নত প্রশিক্ষণের তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। দিনহাটা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সচিব সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘আমরা নিজেদের মতো করে সংহতি ময়দানে ক্রিকেট ও ফুটবলের প্রশিক্ষণ দিই। মোট আটজন কোচ রয়েছেন। কোচের সংখ্যা ও পরিকাঠামো দুটিই বাড়ানো উচিত। মাঠ নিয়েও খুব সমস্যা রয়েছে।’ অন্য মহকুমাগুলিতেও একই অবস্থা। নিউ কোচবিহারে প্রস্তাবিত স্পোর্টস হাবের থমকে থাকা কাজ নিয়ে সম্প্রতি আন্দোলন শুরু করেছে সিপিএম। দ্রুত কাজ শুরু করার দাবিতে হাবের প্রাচীরে তারা পোস্টারও সেঁটেছে।
পরিকাঠামোর অভাবের জন্য খেলাধুলোর প্রশিক্ষণে যে বেগ পেতে হচ্ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থাও। সংস্থার সচিব সুব্রত দত্তের কথায়, ‘মহকুমাগুলিতে আমাদের ঠিকমতো পরিকাঠামো নেই। আবার সেখানকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জেলা স্তরে এনে নিয়মিত রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা আমাদের নেই। তাই খেলোয়াড়রা দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ পরিকাঠামো নিয়ে প্রাক্তনীরা ক্ষুব্ধ। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল বিভাগের প্রাক্তন সচিব সমীর ঘোষ বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত কোচ নেই। নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় তুলে আনার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার যেভাবে কাজ করা প্রয়োজন তার কোনও তাগিদ দেখা যায় না।’
দীর্ঘদিন ধরেই কোচবিহারে ইন্ডোরে ক্রিকেট অনুশীলনের ব্যবস্থা করার দাবি ছিল। সেই দাবি মেনে কোচবিহার স্টেডিয়ামে কাজ চলছে ঠিকই, তবে তা ধীরগতিতে। কবে থেকে সেই পরিষেবা শুরু হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা বাংলা ক্রিকেট দলের কোচ শিবশংকর পাল বলেন, ‘বহু জেলাই ইতিমধ্যে ইন্ডোর পরিষেবা চালু করে ফেলেছে। কিন্তু কোচবিহার এখনও পিছিয়ে রয়েছে। ইন্ডোর পরিষেবা দ্রুত চালু করা প্রয়োজন যাতে সারাবছরই ক্রিকেটের অনুশীলন চলে।’
সঠিক পরিকাঠামো না থাকায় কোচবিহারের খেলোয়াড়রা দিন-দিন পিছিয়ে পড়ছেন। ক্রীড়াবিদরা বলছেন, পরিকাঠামো ঠিক করলেই যে রাতারাতি নামী খেলোয়াড় উঠে আসবে বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। তবে পরিকাঠামো ও পরিচালনা দুটিই ঠিক থাকলে প্রতিভা যে উঠে আসবেই, সে বিষয়ে নিশ্চিত তাঁরা।