জাকির হোসেন, ফেশ্যাবাড়ি: কোচবিহারের (Cooch Behar) কালপানিতে যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারেই বেহাল। তোর্ষা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই এলাকায় যেতে ৪০ কিমি ঘুরপথে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এলাকায় উন্নয়নেরও দেখা নেই। এবার প্রশ্নের মুখে এলাকার শিক্ষাও। এলাকার সাতটি স্কুলে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। দুটি মাদ্রাসাতেও একই সমস্যা। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকলেও সমস্যা সমাধানে এতকাল কেউই উদ্যোগ নেয়নি।
কালপানির স্কুলগুলির এই সমস্যার কথা মেনে নিলেন খাগড়াবাড়ি সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক যুগল বালা। আশ্বস্ত করে তিনি বললেন, ‘সমস্যার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসা হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটে যাবে।’
কালপানিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে কয়েক হাজার পড়ুয়া এলাকার বিভিন্ন স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। কিন্তু এলাকার কোনও স্কুলেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। কোনও স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ক্লাসরুম, টেবিল-বেঞ্চেরও অভাব রয়েছে। নেই মিড-ডে মিল খাওয়ার ডাইনিং হল কিংবা সীমানা প্রাচীর।
কালপানি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিতকুমার দাস বলেন, ‘স্কুলে সীমানা প্রাচীর নেই। ফলে ৬৮ জন পড়ুয়ার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় থাকি আমরা। মিড-ডে মিল খাওয়ার ডাইনিং হলও তৈরি হয়নি। খোলা আকাশের নীচে মাঠে বসে খাবার খেতে হয় পড়ুয়াদের।’ একই সমস্যা রয়েছে চাঁপাগুড়ি চতুর্থ পর্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। চাঁপাগুড়ির টিআইসি তন্ময় সাহা বললেন, ‘খাবার আলাদা ঘর না থাকায় অসুবিধা হচ্ছে ৮৯ জন পড়ুয়ার।’
পূর্ব কালপানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবার ডাইনিং হল তৈরির কাজ শেষই হয়নি। এই স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৪৪। প্রধান শিক্ষক খোকন সাহার অভিযোগ, ‘সমস্যার কথা একাধিকবার প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’ মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিবানী রায় ফের এই সমস্যার বিষয়ে প্রশাসনকে জানানোর আশ্বাস দিলেন।
অন্যদিকে, কালপানি রাজমোহন উচ্চবিদ্যালয়ে ৬০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলটিতে ১৭ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র চারজন। এর প্রভাব পড়ছে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনওরকমে পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়ের ডাইনিং শেডের দশাও বেহাল। শৌচালয় এবং ক্লাসরুমের অভাব রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সুবীর ভৌমিক বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ের ১৩ জন শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। সমস্যার কথা উচ্চশিক্ষা দপ্তরে জানানো হয়েছে।’
একই সমস্যা ২ নম্বর কালপানি পবন দেবসিংহ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালপানি গভর্নমেন্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একই ছবি চোখে পড়বে কালপানি শিশুশিক্ষাকেন্দ্র, ৪ নম্বর কালপানি দৌলতউদ্দিন জুনিয়ার মাদ্রাসা এবং ২ নম্বর কালপানি নিয়ামত আলি মিয়াঁ সিনিয়ার মাদ্রাসায় গেলেও। আশ্বাস তো মিলছে, কিন্তু সমস্যার সত্যিকারের সমাধান কবে হবে, সেটা সময়ই বলবে।