কোচবিহার: অফিসে ঢোকার নির্দিষ্ট সময়ের আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। তখনও এনবিএসটিসি’র অনেক কর্মী অনুপস্থিত। এবার সেই কারণে নিগমের ৩০ জন কর্মী-আধিকারিকের প্রাপ্য ছুটি থেকে একটি করে ক্যাজুয়াল লিভ (সিএল) বাদ দেওয়া হল। সোমবার সাগরদিঘির পাড়ে এনবিএসটিসির পরিবহণ ভবনে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় কর্মীদের এমনই দাওয়াই দিলেন। নিগমের অফিসে কাজের সংস্কৃতি ফেরাতে চেয়ারম্যানের এমন সিদ্ধান্ত এনবিএসটিসি’র অন্দরে যথেষ্ট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, একদিন দেরি করে আসায় সরকারি নিয়মানুযায়ী ‘লেট প্রেজেন্ট’ না দিয়ে চেয়ারম্যান সরাসরি কেন সিএল বাদ দিলেন তা নিয়ে সংস্থার একাংশের কর্মী ও আধিকারিকরা প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এনিয়ে পার্থপ্রতিম বলেন, ‘কর্মীদের অফিসে ঢোকার সময় সকাল সাড়ে ১০টা। কিন্তু সোমবার সকাল ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আমি অফিস পরিদর্শন করে দেখি অনেকেই তখনও অফিসে আসেননি। এরপর উপস্থিতির খাতায় ৩০ জন কর্মীর সিএল কেটে নেওয়া হয়। পাশাপাশি আমি সংস্থার এমডিকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে সমস্ত ডিপো ও অফিসে নোটিশ জারি করে কর্মীদের সময়মতো অফিসে আসতে বলা হয়।’ তবুও কর্মী-আধিকারিকরা কথা না শুনলে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি আরও জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই খবর আসছিল যে পরিবহণ ভবনের কর্মী-আধিকারিকরা অনেকেই অফিসে সময়মতো আসছেন না। বিষয়টি সরেজমিনে পরীক্ষা করতে এদিন তিনি পরিদর্শনে আসেন। এর সঙ্গে আগামীদিনে একইভাবে তিনি জেলার অন্যান্য ডিপোতেও যাবেন বলে জানিয়ে দেন।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ৪০০ জন স্থায়ী কর্মী। নিগমের পরিবহণ ভবনে ৭৫ জন কর্মী-আধিকারিক কাজ করেন। এই অবস্থায় চেয়ারম্যানের এদিনের সিদ্ধান্তে প্রায় অর্ধেক কর্মী অফিস থেকে চলে যান। ওই ৩০ জনের মধ্যে কয়েকজন আধিকারিকও ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ফলে সোমবার ভবনের বেশিরভাগ ঘরে ফাঁকা চেয়ার, টেবিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভবনে উপস্থিত কর্মীরা জানালেন, ভবনের ক্যাশ সেকশনে দুজন রয়েছেন। দেরি করে আসায় এদিন দুজনকেই সিএল দেওয়া হয়। ফলে ক্যাশের কাজকর্ম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সেই ঘরে কেবল একজন মহিলা কর্মী ছিলেন। তিনি বললেন, ‘দেরি করে আসায় আমাদের দুজনের সিএল কেটে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে একজন চলে গিয়েছেন। আমিও কিছুক্ষণ পরে চলে যাব। হিসেবমতো আমি এদিন অনুপস্থিত। তাই আমার পক্ষে ক্যাশের কাজকর্ম করা বা চেক দেওয়া সম্ভব হবে না।’
অন্যদিকে, নিগমের চেয়ারম্যান হঠাৎ এভাবে ভবন পরিদর্শন করে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিবহণ ভবন সহ এনবিএসটিসি’র সমস্ত কর্মীদের মধ্যে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। কর্মীদের অনেককে এদিন বলতে শোনা যায়, সরকারি নিয়মানুযায়ী তিনদিন লেট প্রেজেন্ট হলে একটি সিএল বাদ যায়। সেক্ষেত্রে একদিন পরিদর্শন করে কীভাবে চেয়ারম্যান এই সিদ্ধান্ত নিলেন? এছাড়া এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান ছাড়াও এমডি ও ডেপুটি এমডি দুজনের চেম্বারই পরিবহণ ভবনে রয়েছে। অন্যদিকে, ভবনটিতে বেশ কিছুদিন ধরে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে এমডির চেম্বার বর্তমানে সংস্থার পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের অফিসে ও ডেপুটি এমডির চেম্বার সংস্থার সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসে অস্থায়ীভাবে সরে গিয়েছে। তাই আধিকারিকরা বর্তমানে পরিবহণ ভবনে উপস্থিত না থাকাতেই কর্মী-আধিকারিকদের মধ্যে অনেকে দেরি করে অফিসে আসছিলেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।