কোচবিহার: উত্তরে গরম বাড়ছে। এই অবস্থায় শহরতলির খাগড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গুঞ্জবাড়ি পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জলসংকটে ভুগছেন। অভিযোগ, এলাকায় প্রায় দু’মাসের বেশি সময় ধরে জল নেই। জলের সমস্যার কথা প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার। এখন কতদিনে পানীয় জলের সুরাহা হবে, সেই প্রশ্নই উঠছে।
যদিও খাগড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শম্পা ধর বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি। শম্পার বক্তব্য, ‘সমস্যাটি হয়তো বেশিদিনের নয়। বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউই আমাকে জানায়নি। তবে খুব শীঘ্রই আমি লোক পাঠিয়ে বিষয়টি দেখছি।’
গরম পড়তেই শহরতলির গুঞ্জবাড়ি পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় জলসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এলাকায় এতগুলি মানুষের বসতি থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকাজুড়ে দুটি কল থাকলেও একটিতেও পানীয় জল মিলছে না। এলাকার বাসিন্দা তথা আইটিআইয়ের অধ্যাপক তাপস ভুঁইয়া ক্ষোভ উগড়ে দিয়েই বললেন, ‘এলাকায় জলের সমস্যা নিত্যদিনের। আমাদের প্রতিদিনই পুরসভা এলাকায় গিয়ে জল নিয়ে আসতে হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন শীতঘুমে রয়েছে।’
ওই এলাকায় পরিস্রুত জল সরবরাহের দায়িত্ব পিএইচই’র। দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত ধর বলেন, ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে আমাদের এবিষয়ে জানানো হয়নি। বিষয়টি দেখে শীঘ্র পদক্ষেপ করা হবে।’
শুক্রবার সকাল। ঘড়িতে তখন সাড়ে ৭টা পেরিয়েছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এক ষাটোর্ধ্ব জলের ড্রাম হাতে নিয়ে হেঁটে চলেছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার টিউবওয়েলগুলি থেকে জল আসছে না। অগত্যা পুরসভা এলাকার কলে গিয়ে লাইন দিতে হচ্ছে তাঁদের। তবে শুধু তিনিই নন। পুরসভা এলাকায় কলের পাশাপাশি কেনা জলে ভরসা রাখতে হচ্ছে অনেককেই। ক্ষোভের সুরেই ওই বাসিন্দা বলেন, ‘এতটা পথ হেঁটে জল আনতে প্রতিদিনই যেতে হয়। বাড়ির সামনে দুটি কল থাকলেও দুটিই বিকল। এই অবস্থায় খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
গুঞ্জবাড়ি পোস্ট অফিসের গলি দিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখা গেল, টিউবওয়েল চত্বর ভরে রয়েছে আগাছা এবং আবর্জনায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এলাকার এই পরিস্থিতি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের। কিছুটা দূরে আরেকটি কল থাকলেও সেটি থেকেও জল আসছে না বলে স্থানীয়রা জানালেন। জলের সমস্যার বিষয়ে এলাকার শিক্ষক সুকান্ত সাহার কথায়, ‘গরমে এমনিতেই সকলে নাজেহাল। তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জল নেই। বাধ্য হয়ে অনেকে জল কিনে খেলেও এলাকার কিছু মানুষদের পক্ষে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। অগত্যা গরমের মধ্যেও তাঁদের বাইরে থেকে জল টেনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। তাঁদের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি নিয়ে শীঘ্র পদক্ষেপ করার দাবি জানাচ্ছি।’