মনোজ বর্মন, শীতলকুচি: কোচবিহারের (Cooch Behar) পশ্চিম শীতলকুচির রাজারবাড়ি গ্রাম। মাথাভাঙ্গা-সিতাই সড়কের ওপর, শীতলকুচি (Sitalkuchi) বাজার থেকে পশ্চিমদিকে চার কিলোমিটার গেলেই এই রাজারবাড়ি গ্রাম। সেই গ্রাম এখন সংবাদের শিরোনামে। দু’একদিন পরপরই গ্রামে ঢুকছে দামি দামি গাড়ি। সেইসঙ্গে গোটাকয়েক বাইক। নেতারা আসছেন। তবে যাঁকে কেন্দ্র করে লাইমলাইটে রাজারবাড়ি, সেই উকিল বর্মনের এখনও কোনও খোঁজখবর নেই।
রাজারবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা উকিল বর্মন পেশায় কৃষক। বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারধর করে ভারতীয় সীমান্ত থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার পর ২০ দিন কেটে গেলেও এখনও বাড়ি ফেরেননি সেই অপহৃত কৃষক। ফ্ল্যাগ বৈঠক করেও কৃষককে ফেরাতে ব্যর্থ বিএসএফ। তবে কাজের কাজ কিছু না হলেও, উকিলের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারা। উকিলের টিনের চালার বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় লেগেই থাকছে। তাঁর স্ত্রীকে সকলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু উকিল কবে ফিরবেন? তা সঠিকভাবে কেউই বলতে পারছেন না। তৃণমূল নেতাদের আশ্বাস, বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরের। রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে জানিয়েছে। আর বিজেপির আশ্বাস, বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
তবে নেতাদের আশ্বাসে আর ভরসা পাচ্ছেন না অপহৃত কৃষকের স্ত্রী শৈববালা বর্মন। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন উকিল। উপার্জনকারী না থাকায় কী করে সংসার সামাল দেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না শৈববালা। বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সীমান্তের ওপারে বিঘাচারেক জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন উকিল। সেই সংস্থা প্রতি সপ্তাহে কিস্তি নিতে আসে। উকিল না থাকায় সেই কিস্তিও দিতে পারছেন না শৈববালা।
উকিলের দুই ছেলে। এক ছেলে কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। বাবার খবর পাওয়ার পরেও বাড়ি ফিরতে পারেননি এখনও। ছোট ছেলে বাড়িতেই থাকেন। শৈববালা বলেন, ‘নেতারা এসে শুধুই সান্ত্বনা দেয়। ও কবে ফিরবে, সে ব্যাপারে কেউই কিছু বলে না। স্বামীকে ফেরাতে কেউ আদতে কোনও উদ্যোগ নিয়েছে কি না, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’ সংসার সামলাতে আর্থিক সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছেন শৈববালা।
ইতিমধ্যেই উকিলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন শীতলকুচির বিধায়ক বিজেপির বরেন বর্মন। রবিবার দুপুরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি পরিমল বর্মন, তৃণমূল কিষান ও খেতমজদুর সংগঠনের জেলা সভাপতি খোকন মিয়াঁ প্রমুখ উকিলের বাড়িতে খোঁজ নিতে যান। প্রাক্তন মন্ত্রী অবশ্য এদিন তাঁদের আর্থিক সহযোগিতাও করেন। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জানিয়েছেন। সেই বার্তা দিতেই উকিল বর্মনের বাড়িতে আসা হয়েছে।’
শৈববালা আর্থিক দুরবস্থার কথা তাঁকেও জানিয়েছেন। সেকথা শোনার পর পরিবারটিকে সবরকমের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রবি। আর কোনওভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা যায় কি না, সেব্যাপারেও খোঁজ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।