চেন্নাই: স্কুলঘরে পড়াশোনা করছে সবে কথা বলতে শেখা শিশুরা। সেখানে হুটহাট ঢুকে পড়ছে কখনও টিয়া, কখনও ময়না কিংবা খরগোশ। সেই দেখে পড়া ফেলে বাচ্চার দল হইহই করে ছুটে যাচ্ছে অবলা অতিথিকে আদর করতে। এই দৃশ্য একেবারে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার চেন্নাইয়ের (Chennai) চেটপেটের মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ ম্যাট্রিকুলেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিশু বিভাগে।
ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার গ্রেস শীলা আদ্যন্ত প্রকৃতিপ্রেমিক। তিনি একাধারে প্রধান শিক্ষিকা এবং আহত পশুপাখিদের চিকিৎসকও বটে। নানা জায়গা থেকে আহত অবলা প্রাণীদের জুটিয়ে এনে তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন স্কুলচত্বরেই। কোন পাখি মা-হারা, কে ডানা ভেঙে উড়তে পারে না, কে শিকারিদের আক্রমণে অসুস্থ—তিনি নিজের হাতে তাদের সেবা ও পরিচর্যা করে সুস্থ করে তুলে কচিকাঁচাদের মধ্যে ছেড়ে দেন। কারও অবস্থা বেশি খারাপ হলে সাহায্য নেন স্থানীয় পশু হাসপাতালের।
সম্প্রতি তাঁর বন্ধু সাবিনা ভার্গিজ তাঁর হাতে ধরিয়ে দেন একটি মৃতপ্রায় ময়নাপাখিকে। তিনতলার এসি ইউনিটের পাশে বাসা বেঁধে থাকতে গিয়ে পাখিটি পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। প্রাণটাও যাচ্ছিল প্রায়। শীলাই বাঁচিয়ে তোলেন পাখিটিকে। সে আবার আগের মতোই গান গায় আর শীলা যেখানে যান, সে পিছু নেয়। শ্রেণিকক্ষ থেকে শোওয়ার ঘর, সর্বত্র অবাধ যাতায়াত তার। একইরকম যত্নআত্তি পায় অন্য প্রাণীরাও।
তবে শীলা বা শিশুপড়ুয়াদের ভালোবাসলেও নিজেদের মধ্যে সর্বক্ষণ ঝগড়া করে অবলা প্রাণীরা। আর এভাবেই পড়ুয়াদের পশু ও প্রকৃতি-পাঠ দেন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম। মাঝেমধ্যেই তিনি তাদের নিয়ে যান জঙ্গল এলাকায় প্রকৃতি ও প্রাণীদের আরও নিবিড় সান্নিধ্য পেতে। শীলা বলেন, ‘ছোট পোকামাকড়কেও গাড়ির চাকায় পিষে যেতে দিই না। গাছের পাতা ছুঁইয়ে সরিয়ে দিই। আমি চাই আমার ছেলেমেয়েরা জানুক, এক একটা প্রাণ কত মূল্যবান!’