সৌম্যজ্যোতি মণ্ডল, চাঁচল : স্বামী ও ছেলে দুজনেই মারা গিয়েছেন। তিন কূলেও তাঁর কেউ নেই। শরীরের একটি অংশ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। কিন্তু সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত চাঁচলের খেলেনপুরের সাবেরা বেওয়া। না পেয়েছেন বিধবাভাতা, না পেয়েছেন ঘর। একাধিকবার ব্লক দপ্তরে গিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের অনুনয় বিনয় করেছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের কাছেও কয়েকবার এসেছেন। কিন্তু দরজায় তালা দেখে ফিরে গিয়েছেন। তাই কোনও উপায় না দেখে শনিবার প্ল্যাকার্ড হাতে বিধায়কের বাসভবনের দরজার সামনে ধর্নায় বসে পড়লেন সাবেরা বেওয়া। প্ল্যাকার্ডে লেখা, আমি ঘর, ভাতা কিছু পাইনি। তাই বিধায়কের বাড়ির সামনে বসে আছি। চঁাচল সদরে বিধায়কের বাসভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বসে থাকা ওই বৃদ্ধার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর বিধায়কের লোকজন তাঁকে দেখতে পেয়ে বিধায়কের ঘরে নিয়ে যান। সেখানে বিধায়ক তাঁর সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনিক আধিকারিকদের জানান। সাবেরা বেওয়ার ভাতা এবং ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুনরায় ব্লকে জমা পড়েছে। তবে এদিনের ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরেই বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেন তাঁরা। সম্প্রতি ব্লক তৃণমূলের একাধিক নেতৃত্ব বিধায়কের এলাকায় না থাকা এবং সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এদিকে সরেজমিনে সাবেরা বেওয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাস্তবেই তঁার ঘরের জরাজীর্ণ দশা। সেখানেই কোনওভাবে পলিথিন এবং কাপড় টাঙিয়ে দিন গুজরান করছেন তিনি। শরীর অসমর্থ, তাই আর খাটতে পারেন না। এখনও পর্যন্ত ভাতাও অমিল। ফলে চেয়েচিন্তে তঁার দিন কাটছে।
সাবেরা বেওয়া জানান, ‘এর আগে বিধায়কের বাড়ি এসে বন্ধ দেখে ঘুরে গিয়েছি। অনেক জায়গায় গিয়েছি, কোনও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বিধায়কের বাড়ির সামনে বসেছিলাম। উনি সব কাগজপত্র জমা করতে বললেন। কিন্তু জানি না আদৌ কী হবে।’
তবে এদিনের ঘটনার পর পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদকে দুষে তারা এতদিনে এই কাজ করতে পারলে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর কাছে আসতে হত না বলে দাবি করলেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে দলের অন্দরেও। কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
যদিও বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের সাফাই, ‘ওই বৃদ্ধা ধর্না দেননি। উনি আমার কাছে এসেছিলেন। যাঁরা আমার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা কী করেছেন?’ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ির কটাক্ষ, ‘সম্প্রতি ওখানে বিধায়ক এবং বিরোধী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব সামনে আসছে। তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে এতই ব্যস্ত যে সাধারণ মানুষের কথা খেয়াল রাখতে পারছে না।’
বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে তোপ দেগেছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি শেখ আফসার আলি। তাঁর কথায়, ‘উনি সঠিক সময় দিলে সকলের দুঃখদুর্দশা জানতে পারতেন। যে ছবি দেখতে হল সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’