নয়াদিল্লি: পহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তিক্ত সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশে চলতে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির পুনরুত্থানের ঘটনায় সতর্ক ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারত তার পূর্ব সীমান্তজুড়ে স্থল, আকাশ ও জলপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি উচ্চস্তরের নিরাপত্তা বৈঠকে বিএসএফ, সিআইএসএফ, রাজ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পদ্মাপারের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়। এমনকি ঢাকায় ১০ মে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্যে তাদের পতাকা বহন করে হামাসের প্রতি সমর্থন জানানোয় ভারতের নিরাপত্তা মহলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের এক অভিযানে জেএমবি-র সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, পাকিস্তান থেকে পরিচালিত একটি নেটওয়ার্কের নির্দেশে তারা ভারতে সক্রিয় ছিল। এতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পাশাপাশি পাকিস্তানি মদতের বিষয়টিও নতুন করে সামনে এসেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, এদের সক্রিয়তা মূলত পাকিস্তানভিত্তিক ‘হ্যান্ডলার’-দের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছিল। এই তথ্য শুধুমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই নয়, বরং সমগ্র পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও গোয়েন্দাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
এরই মধ্যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত বরাবর তাদের মোতায়েন পরিকল্পনায় রদবদল শুরু করেছে। যেসব অঞ্চলে সীমান্ত সহজেই পেরিয়ে যাওয়া যায়, সেখানে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, সিআইএসএফ ও রাজ্য পুলিশকে কলকাতা, বাগডোগরা, আগরতলা, শিলচর-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিমানবন্দরগুলিতে নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে বাড়তি স্ক্রুটিনি, লাগেজ স্ক্যানিং ও যাত্রী যাচাইও বাড়ানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, মালদা এবং উত্তর ২৪ পরগনা, এই চারটি জেলাকে হাই-রিস্ক জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কূটনৈতিক স্তরেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। চরমপন্থার উত্থান, জঙ্গিদের প্রকাশ্যে সভা করার মতো ঘটনাগুলি নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে উদ্বেগ জানিয়েছে দিল্লি।