সুবীর মহন্ত, বালুরঘাট: এলাকার এক শিশু কিছুদিন ধরে অসুস্থ। তার জেরে ডাইনি অপবাদ দিয়ে স্থানীয় বিধবা আদিবাসী মহিলাকে ত্রিশূল দিয়ে খুঁচিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টা করল একদল প্রতিবেশী। এখানেই শেষ নয়, অভিযোগ, ওই মহিলার বাড়ির বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে দফায় দফায় নিগ্রহ করা হয়। আরও অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে একবার হামলার পর, বুধবার সকালে ফের একদল উত্তেজিত মানুষ ওই মহিলার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মারধরের পরিকল্পনা করে।
বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয় যাতে ওই মহিলা আর তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে বের হতে না পারে। এরই মধ্যে সামান্য সুযোগ পেতেই ওই জখম মহিলাকে তাঁর ছেলে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। আপাতত তিনি সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে দাবি তাঁর ছেলের। কুসংস্কারকে হাতিয়ার করে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাটের (Balurghat) ডাঙা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে। এদিন বিকেলে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ জানান নির্যাতিতা মহিলার ছেলে। ঘটনায় তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ওই পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বালুরঘাট থানা (Balurghat Police Station)।
সম্প্রতি বালুরঘাটের ডাঙা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে এক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই শিশুটির অসুস্থতার জেরে গ্রামের এক বিধবা মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেয় একদল প্রতিবেশী। ক্রমে ওই প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়ায় এলাকার অনেকেই। এরপর মঙ্গলবার রাতে দল বেঁধে ওই বিধবা মহিলার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে মারধর করার পাশাপাশি ত্রিশূল দিয়ে খুঁচিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়। ওই বিধবা মহিলার বাড়ি থেকে খানিকটা দূরেই তাঁর ছেলে সপরিবারে থাকেন। মায়ের উপর হামলার কথা জানার পরেও উত্তেজিত প্রতিবেশীদের তাণ্ডবে ওই বিধবার ছেলে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। তবে এদিন সকালে ফের ওই মহিলার বাড়ির সামনে জমায়েত হতে শুরু করে। তখনই কোনওরকমে মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান ছেলে।
আক্রান্ত মহিলার ছেলের দাবি, ‘গ্রামের এক পরিবার অযথা আমার মাকে ডাইনি অপবাদ দেয়। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ওরা ত্রিশূল দিয়ে খুঁচিয়ে মাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছে।’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বালুরঘাট ব্লক সম্পাদক সুবীর দে বলেন, ‘পারিবারিক বা গ্রাম্য বিবাদের জেরে অনেকে ডাইনি অপবাদের মতো কুসংস্কারকে হাতিয়ার করে। কিছু গুনিন বা মাতব্বররা তাতে মদত দেয়। গ্রামে যাতে এই ধরনের কুসংস্কার না ছড়ায়, তা নিয়ে ফের সচেতন করা হবে।’