পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: এক দুটো নয়। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বালুরঘাটের একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আপাতত ছাত্রশূন্য স্কুলগুলি কার্যত পোড়োবাড়ির চেহারা নিয়েছে। যেখানে রাতে নেশার আসর বসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এমনকি চুরি যাচ্ছে স্কুলের সামগ্রী। স্কুলের জায়গা দখল হওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠছে। যা নিয়ে পর্যবেক্ষণের পরে পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।
বালুরঘাটের খাদিমপুর এলাকার গৌরীরানি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াপাড়া এলাকার সুকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকভবানী এলাকার মাইকেল স্কুল, বঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কিছু স্কুলের অবস্থা একই। ক্রমশ স্কুলের জমি দখল হয়ে আসছে। কোথাও কমিউনিটি হল গড়ে উঠছে, তো কোথাও শৌচালয়। স্কুলের জায়গায় সরকারি প্রকল্পের ভবন নির্মিত হওয়ার ফলে শিক্ষার পরিসর কমে আসছে। আবার কোথাও স্থানীয়রাই নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে পরিত্যক্ত স্কুলের জমি ব্যবহার করছে।
এমনকি স্কুলঘরের আচ্ছাদনের টিন পর্যন্ত চুরি হয়ে যাচ্ছে। ভবনের ইট খুলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, রাত বাড়তেই নেশাগ্রস্তদের আনাগোনা বাড়ছে স্কুল চত্বরে। পার্শ্ববর্তী বাড়ির শিশু ও মহিলারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। স্থানীয় অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন বাচ্চাদের। অবিলম্বে স্কুল ভবন সংস্কার করে নতুন চেহারায় প্রাথমিক স্কুল তৈরির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পরিত্যক্ত এমন এক স্কুলের পাশেই বাড়ি সমর মালির। তাঁর দাবি, ‘এখানে আগে স্কুলের পঠনপাঠন চলত। এখন ফাঁকা পড়ে আছে। নেশাগ্রস্তরা সবটা দখল করেছে। প্রশাসনিক কোনও পদক্ষেপ নেই। এখানে এসে গাঁজা, মদ এমনকি হেরোইন খায় দুষ্কৃতীরা। টাকার প্রয়োজন হলে স্কুলের টিন ভেঙে নিয়ে চলে যাচ্ছে। অশ্লীল ভাষায় চিৎকার করে। বাড়ির ছোট মেয়ে ও মহিলারা আতঙ্কে থাকে।’
খাদিমপুর এলাকার তাপস নন্দীর আক্ষেপ, ‘এখানে গৌরীরানি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। বহু বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে আছে। স্কুলের জায়গায় কমিউনিটি হল তৈরি হয়েছে। অর্ধসমাপ্ত একটি ভবন নষ্ট হতে চলেছে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় হলে অনেক দুঃস্থ পরিবারের শিশুরা উপকৃত হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদার আশ্বাস, ‘শিক্ষার স্বার্থে স্কুলের জায়গাগুলি দান করা হয়েছে। সেগুলি কারা দখল করছে, আমরা পরিদর্শন করে দেখব। আমাদের অনুমতি ছাড়া সেখানে কিছু নির্মাণ করতে পারে না। রিপোর্ট তৈরি করে সেগুলো দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে যদি আবার বিদ্যালয় তৈরি করা যায়, সেই পদক্ষেপও করব।’