বালুরঘাট: বিয়ের পরই মন যেন উড়ু-উড়ু! মন টিকছে না শ্বশুরবাড়িতে। অগত্যা বাড়ির বাইরে পাড়ি। দক্ষিণ দিনাজপুরে একাংশ গৃহবধূ বিয়ের পরেই ঘর ছাড়ছেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে এই জেলার অন্তত ২৫০-এর বেশি গৃহবধূ ঘর থেকে পালিয়েছেন। এর মধ্যে জেলার তপন, বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুরের গৃহবধূদের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে পালানোর প্রবণতা বেশি নজরে এসেছে। গৃহবধূদের পাশাপাশি নাবালিকাদের নিখোঁজের ঘটনাও এই জেলায় বেশি। তবে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হওয়ায় তাদের খোঁজে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে। কিন্তু গৃহবধূদের বেশিরভাগই জড়িয়ে যাচ্ছেন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে। মনের মানুষের সঙ্গে সংসার করবেন বলে গৃহ ছাড়ছেন তাঁরা। ওই বধূদের খোঁজে তাঁদের স্বামীরা হন্যে হয়ে ঘুরছেন থানায় থানায়। কিন্তু নিখোঁজ বধূরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পুলিশ জোরও খাটাতে পারছে না। পুলিশ একাংশকে উদ্ধার করতে পারলেও নিখোঁজ রয়েছেন বহু। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আমাদের কিছু করার থাকছে না।’
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নয়টি থানা এলাকা থেকে চলতি বছরের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি বিভিন্ন বয়সি মহিলার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
তিন দিক সীমান্ত ঘেরা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কার্যত কাজের অভাব রয়েছে। এই জেলার প্রচুর মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিনজেলায় কাজ করতে যান। বাড়ির পুরুষ মানুষ বাইরে থাকায় দিনভর বধূরা হাতে ফোন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকেন। আর ফোনে বন্ধুত্ব পাতিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্বের অছিলায় বধূদের নিয়ে পালানো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে গৃহবধূ বা কিশোরীরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে যাঁদের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বেশিরভাগই কর্মহীন কিশোর বা তরুণ। আবার এখানে কাজ জুটছে না বলে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে বাইরে থাকছেন, এমন কিশোর বা তরুণরাও কিন্তু এই ফোন বা অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে লোভ দেখিয়ে বাড়ির মেয়ে–বৌদের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। কর্মহীন কিশোর বা তরুণ মিষ্টি কথায় ফাঁদে ফেলছে বাড়ির মেয়ে, বৌদের। এটাকেই পেশা হিসেবে নিচ্ছেন অনেকে। এই ঘটনাগুলির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক কতটা রয়েছে তাও কিন্তু প্রশ্নের মুখে। কারণ বালুরঘাট শহর বা গ্রামের বেকার তরুণদের সঙ্গে মোহে পড়ে পালিয়ে গিয়েও একসময় গৃহবধূরা কিন্তু ফের নিজেদের পুরোনো সংসারে ফিরে আসছেন। দেখা যাচ্ছে মোহ কেটে গেলেই আবার তাঁরা ফিরে আসছেন।
বালুরঘাটের কবি স্বরূপ সান্যাল বলেন, ‘দক্ষিণ দিনাজপুর সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতাম। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মানসিকতার মানুষজন আসায় অপসংস্কৃতি আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আমরা নিজেদের শিকড় হারাচ্ছি।’
সমাজকর্মী সুরজ দাশের কথায়, ‘জেলার বিভিন্ন বয়সি নারীদের জেলা থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভিনরাজ্যে বা অন্য কোথাও নিয়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। অনেকেই উদ্ধার হচ্ছে, আবার অনেকেই এখনও অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যধিক ব্যবহার এর কারণ।’